বিএনপি নেতারা এখন স্বীকার করেন হেফাজতের ওপর তাদের এতটা নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হয়নি। সরকার ও বিরোধীপক্ষের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিয়ে আন্দোলন থেকে কেটে পড়ে হেফাজত। ফায়দা তোলে সরকার। জামায়াতে ইসলামী মাঝপথে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে। এটা নাকি তাদের কৌশল। নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধ মামলা থেকে বাঁচানোর। তারা যে কিছুটা সফল তার প্রমাণ তো খালি চোখেই দেখা যায়। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সোচ্চার গণজাগরণ মঞ্চকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বুদ্ধিজীবীরাও নীরব নিথর হয়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে টকশোতে কিছু বয়ান শোনা যায়। উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের ভাল ফল করার পেছনে সরকারের সঙ্গে এক অঘোষিত সমঝোতার আলামত দেখা যায়। বিএনপিকে মাইনাস করে জামায়াতকে সামনে আনার কৌশল এখানে প্রবল। কিছুটা কাজ হয়েছে এই কৌশলে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে। জামায়াত নেতারা বলেন এটা আমাদের নয়, সরকারের প্রয়োজনেই হয়েছে। তবে তারা এক বাক্যে বলেন, সমঝোতা-টমঝোতা কিছু না। সবই বাজে কথা। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে চালু করা যুদ্ধাপরাধ মামলাগুলোতে হঠাৎ করেই যেন শ্লথগতি এসে গেল। আন্তর্জাতিক শক্তি বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়া এখনও সবাইকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে সোচ্চার। তারা কত দিন এভাবে বলবেন? এখানে তো ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও ভৌগোলিক অবস্থানগত কিছু স্বার্থ রয়েছে। সরকার পূর্বমুখী নীতি গ্রহণ করে পশ্চিমাদের বোঝাতে চাইছে তাদের না হলেও চলবে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে যখন বলা হয়- আমাদের জিএসপির দরকার নেই, তখন বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় সরকার কোনদিকে হাঁটছে। বা কি চাইছে। সরকারের হাতে অনেক কিছু দেয়ার আছে। বিরোধীরা এখন কি দেবে। ভবিষ্যতে এলে হয়তো পাওয়া যেতে পারে। এটা ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। চীন কেন বিগড়ে গেল বিএনপি কি সেটা খতিয়ে দেখেছে। আমার ধারণা তা দেখেনি। চীনকে উপেক্ষা করে তাইওয়ানের ট্রেডমিশন চালু করার পেছনে কোন কূটনৈতিক স্বার্থ ছিল না। কতিপয় ব্যক্তির সুবিধাপ্রাপ্তি ছাড়া। বিগত আন্দোলনের সময় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। এর মধ্যে কারা কতটুকু করেছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু বিএনপির তরফে এসব নিয়ে সোচ্চার কোন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। কেউ নিন্দাও জানাননি। বরং অনেক ক্ষেত্রে উৎসাহ যুগিয়েছেন। সরকার যে অনেক ক্ষেত্রে এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছে তা বিএনপি নেতাদের মুখ থেকে কিছু বক্তৃতায় শোনা গেছে। নীতিগত অবস্থান ছিল অনুপস্থিত। এখন আন্দোলনের কথা বলতে না বলতেই শাসক দলের নেতারা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পুরনো ফাইল খুলে। বিএনপির কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কবুল করুন আর না-ই করুন এটা স্বীকার করতে হবে ভুল ছিল আন্দোলনের নীতি-কৌশলে। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও অনেক কথা আছে দলটির ভেতরে। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটি বলতে পারতো আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন চাই। তখন আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সরকারের পক্ষে কিছু বলার থাকতো না। অতীত রাজনীতি কি বলে? সেনাশাসকদের অধীনেও শেখ হাসিনা বারবার নির্বাচনে গিয়েছেন। তিনি জানতেন ফলাফল কি হবে। ২১ বছর তাকে লড়াই করতে হয়েছে এভাবে। খালেদা নির্বাচনমুখী হলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হতো কিনা তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে। পর্দার আড়ালের খবরাখবর রাখেন এমন কিছু সূত্রের ইঙ্গিত ছিল অন্য কিছু হয়ে যাবে। এতে বেগম জিয়া লাভবান হবেন না। এ কারণে নাকি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল বিএনপি। জামায়াত এখানে অন্য কৌশল নিয়েছিল। বিএনপির মূল দুর্বলতা কি? সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল? নাকি অন্য কিছু। দলের ভেতরে বলাবলি আছে, ‘কাছের লোকেরা’ নাকি যতসব অনিষ্টের মূল। তারা মুহূর্তের মধ্যেই সব কিছু ফাঁস করে দেয়। কার্বনকপি পাঠিয়ে দেয় জায়গামতো। শীর্ষ নেতারা জেনেও না জানার ভান করেন। কারণ তারাই এখন শক্তিশালী। ‘আমলা নেটওয়ার্ক’ও নানামুখী তৎপরতার সঙ্গে লিপ্ত। তারা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে এমন কথা তো প্রায়ই শোনা যায়।
বুধবার, জুলাই ১৬, ২০১৪
ভুল পথে হাঁটছে বিএনপি
বিএনপি নেতারা এখন স্বীকার করেন হেফাজতের ওপর তাদের এতটা নির্ভরশীল হওয়া ঠিক হয়নি। সরকার ও বিরোধীপক্ষের কাছ থেকে নানা সুবিধা নিয়ে আন্দোলন থেকে কেটে পড়ে হেফাজত। ফায়দা তোলে সরকার। জামায়াতে ইসলামী মাঝপথে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে। এটা নাকি তাদের কৌশল। নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধ মামলা থেকে বাঁচানোর। তারা যে কিছুটা সফল তার প্রমাণ তো খালি চোখেই দেখা যায়। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সোচ্চার গণজাগরণ মঞ্চকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বুদ্ধিজীবীরাও নীরব নিথর হয়ে গেছেন। মাঝে মধ্যে টকশোতে কিছু বয়ান শোনা যায়। উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের ভাল ফল করার পেছনে সরকারের সঙ্গে এক অঘোষিত সমঝোতার আলামত দেখা যায়। বিএনপিকে মাইনাস করে জামায়াতকে সামনে আনার কৌশল এখানে প্রবল। কিছুটা কাজ হয়েছে এই কৌশলে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে। জামায়াত নেতারা বলেন এটা আমাদের নয়, সরকারের প্রয়োজনেই হয়েছে। তবে তারা এক বাক্যে বলেন, সমঝোতা-টমঝোতা কিছু না। সবই বাজে কথা। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে চালু করা যুদ্ধাপরাধ মামলাগুলোতে হঠাৎ করেই যেন শ্লথগতি এসে গেল। আন্তর্জাতিক শক্তি বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়া এখনও সবাইকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে সোচ্চার। তারা কত দিন এভাবে বলবেন? এখানে তো ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও ভৌগোলিক অবস্থানগত কিছু স্বার্থ রয়েছে। সরকার পূর্বমুখী নীতি গ্রহণ করে পশ্চিমাদের বোঝাতে চাইছে তাদের না হলেও চলবে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে যখন বলা হয়- আমাদের জিএসপির দরকার নেই, তখন বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় সরকার কোনদিকে হাঁটছে। বা কি চাইছে। সরকারের হাতে অনেক কিছু দেয়ার আছে। বিরোধীরা এখন কি দেবে। ভবিষ্যতে এলে হয়তো পাওয়া যেতে পারে। এটা ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। চীন কেন বিগড়ে গেল বিএনপি কি সেটা খতিয়ে দেখেছে। আমার ধারণা তা দেখেনি। চীনকে উপেক্ষা করে তাইওয়ানের ট্রেডমিশন চালু করার পেছনে কোন কূটনৈতিক স্বার্থ ছিল না। কতিপয় ব্যক্তির সুবিধাপ্রাপ্তি ছাড়া। বিগত আন্দোলনের সময় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। এর মধ্যে কারা কতটুকু করেছে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু বিএনপির তরফে এসব নিয়ে সোচ্চার কোন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। কেউ নিন্দাও জানাননি। বরং অনেক ক্ষেত্রে উৎসাহ যুগিয়েছেন। সরকার যে অনেক ক্ষেত্রে এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছে তা বিএনপি নেতাদের মুখ থেকে কিছু বক্তৃতায় শোনা গেছে। নীতিগত অবস্থান ছিল অনুপস্থিত। এখন আন্দোলনের কথা বলতে না বলতেই শাসক দলের নেতারা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পুরনো ফাইল খুলে। বিএনপির কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কবুল করুন আর না-ই করুন এটা স্বীকার করতে হবে ভুল ছিল আন্দোলনের নীতি-কৌশলে। নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও অনেক কথা আছে দলটির ভেতরে। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটি বলতে পারতো আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন চাই। তখন আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সরকারের পক্ষে কিছু বলার থাকতো না। অতীত রাজনীতি কি বলে? সেনাশাসকদের অধীনেও শেখ হাসিনা বারবার নির্বাচনে গিয়েছেন। তিনি জানতেন ফলাফল কি হবে। ২১ বছর তাকে লড়াই করতে হয়েছে এভাবে। খালেদা নির্বাচনমুখী হলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হতো কিনা তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে। পর্দার আড়ালের খবরাখবর রাখেন এমন কিছু সূত্রের ইঙ্গিত ছিল অন্য কিছু হয়ে যাবে। এতে বেগম জিয়া লাভবান হবেন না। এ কারণে নাকি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল বিএনপি। জামায়াত এখানে অন্য কৌশল নিয়েছিল। বিএনপির মূল দুর্বলতা কি? সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল? নাকি অন্য কিছু। দলের ভেতরে বলাবলি আছে, ‘কাছের লোকেরা’ নাকি যতসব অনিষ্টের মূল। তারা মুহূর্তের মধ্যেই সব কিছু ফাঁস করে দেয়। কার্বনকপি পাঠিয়ে দেয় জায়গামতো। শীর্ষ নেতারা জেনেও না জানার ভান করেন। কারণ তারাই এখন শক্তিশালী। ‘আমলা নেটওয়ার্ক’ও নানামুখী তৎপরতার সঙ্গে লিপ্ত। তারা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে এমন কথা তো প্রায়ই শোনা যায়।