-সুবর্না ! এ্যাই সুবর্না !!
গলার কন্ঠস্বরটা অনেক পরিচিত মনে হলো । ক্ষনিকের জন্য মনে হলো এই স্বরটা আমার অনেক দিনের চেনা । খেয়াল করলাম তিন বছর পর বুকের বাম পাশে সেই ডিপ ডিপ আও্য়াজটা ফিরে এসেছে ।
২
বাস স্ট্যান্ডে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে বসে আছি । বাসের কোনো খোঁজ খবর নাই । রাস্তায় তেমন লোকজন নেই । বৃষ্টির জন্য রাস্তায় গাড়ির আনাগোনা ও কম । বাস স্ট্যান্ডও প্রায় ফাঁকা । খালার বাসায় যাবো । সে জন্যই বাস স্ট্যান্ডে বসে আছি । বাস স্ট্যান্ডে আসতেই আকাশ ভেঙ্গে ঝুম করে বৃষ্টি পড়া শুরু করলো । ইচ্ছা করছে বৃষ্টিতে ইচ্ছামতো ভিজি । একটা সময় ছিলো , যখন বৃষ্টি নামলেই ভেজার জন্য পাগল হয়ে যেতাম । কিন্তু এখন বৃষ্টিতে ভেজা সম্ভব না । তাই ইচ্ছাটাকে আপাতত দমিয়ে রাখতে হলো ।
মাঝে মাঝে দুই-একটা গাড়ি সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে । আশে পাশে একটা সিএনজ়িও নেই । তাই কি আর করা , বসে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ।
৩
ঘাঁড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম । কিছুটা দূরে দাঁড়ানো লম্বা মতন একটা ছেলে আমার নাম ধরে ডাকছে । ছেলেটার পরনে ফুল-হাতা শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট । বৃষ্টিতে শার্টটা শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে । ভিজা চুলগুলো মুখের সামনে চলে আসায় ছেলেটার চেহেরা ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না । হঠাৎ মনে হলো , ছেলেটাকে দেখতে অয়নের মতো লাগছে । ছেলেটা একটু সামনে আসায় এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম ।
হ্যাঁ ,ছেলেটা অয়নই । ছেলেটার আগের চেয়ে একটু স্বাস্থ্য হয়েছে । চোখে চিকন ফ্রেমের চশমাটা নেই । কিন্তু আগের মতোই সেই মায়াবি চাহনি । ইচ্ছে করে যেন অনেকক্ষন ধরে তাঁকিয়ে থাকি ।
এতোদিন দিন পরে অয়নকে দেখবো কখনই ভাবিনি । মনে করেছিলাম হয়ত তার সাথে আর কখনো দেখাই হবে না । অয়নের কথা ভাবতেই তিন বছর আগের ক্যাম্পাস জীবনের পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো ।
৪
এমনি এক বৃষ্টির দিনে অয়নের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল । প্রতিদিন ভার্সিটির বাসেই বাসা থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করি । সেদিনও ভার্সিটির বাসেই বসে ছিলাম । জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখছিলাম । বাস ছাড়তে প্রায় ১০ মিনিটের মত বাকি । হঠাৎ মনে হলো পিছন থেকে আমার দিকে কেউ এক জন তাকিয়ে আছে । পিছন ফিরে দেখলাম চিকন ফ্রেমের চশমা পড়া একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ভাবলাম হয়তো এমনি তাকিয়ে আছে । ব্যাপারটাকে তেমন একটা পাত্তা দিলাম না । কিন্তু না , ছেলেটা প্রায় প্রতিদিনই আমি যে বাসে উঠতাম , ঠিক সে বাসেই উঠতো । আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো ।পরে জানতে পারলাম ছেলেটা আমাদের সাথে একই ব্যাচের , এপ্লাইড কেমিস্ট্রিতে পড়ে ।
কিছুদিন পর সে আমার এক বান্ধবীর হাতে একটা গোলাপ ফুল আর একটা চিঠি পাঠালো । চিঠিটাতে লেখা চার লাইনের কবিতা
আমার একটা স্বপ্ন ছিল্, মেঘনা নদীর ধারে
এক সাথে বসবো দুজন, তোমার হাতটি ধরে ,
সারাদিন জলকেলি আর রাজহংসির প্রেম
শুধু তোমায় নিয়ে সময় কাটাবো, ও হৃদয়ের মেম ।
ততদিনে ছেলেটার প্রতি আমার মায়া লেগে গেছে । তাই আর না করতে পারলাম না ।
এরপর থেকে শুরু হলো আমাদের দুজনের অন্য রকম, সুন্দর সময় শুরু হলো । কেন্টিন , লাইব্রেরি ,সেমিনার ক্যাম্পাসের এমন কোনো জায়গা বাকি ছিলো না, যেখানে আমরা একসাথে সময় কাটাই নি ।সারাদিন দুজনে অনেক গল্প করতাম । যেনো দুজন দুজনার অনেক দিনের চেনা ।
একদিন ঝুম বৃষ্টির দিনে অয়ন এসে আমাকে বলল
-সুর্বনা , চলো আজকে বৃষ্টিতে ভিজি ।
আমি মানা করলাম না । দুজন দুজনের হাত ধরে বাইরে নেমে পড়লাম । সেদিন পুরো ক্যাম্পাস অবাক হয়ে দেখেছিলো, দুইটা ছেলেমেয়ে হাত ধরা ধরি করে হাটছে আর পাগলের মতো বৃষ্টিতে ভিজছে ।
৫
অয়ন আমাকে জিজ্ঞেস করল
- কেমন আছো ?
- হুম … ভালো ।
- জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি ?
- ও হ্যাঁ …তুমি আছো কেমন ?
- এইতো আছি কোনো রকম ।
- বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো ?
- আজকে আসলে ছাতাটা আনতে মনে ছিলো না ।
মনে হলো, গত তিন বছরে মানুষটা এতটুকু বদলায় নি । যে দিন বৃষ্টি হত , সেদিন ইচ্ছা করেই বৃষ্টিতে ভিজতো আর বলতো
-ছাতা হাতে নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে পারি না , তাই বৃষ্টিতেই ভিজি ।
৬
দেখতে দেখতে বাস চলে এলো । আমি অয়নের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে বাসে উঠে পড়লাম । বাসের জানালার পাশে বসে দেখলাম ছেলেটা তখনো বৃষ্টিতে ভিজছে । তাঁর মুখ দেখে মনে হলো হয়তো আমাকে আর কিছু বলতে চাচ্ছিলো ।
বাস ছেড়ে দিলো । অয়ন আর আমার মাঝে দুরত্বটা ক্রমশ বাঁড়ছে । আমি জানালার বাইরে মাথা দিয়ে পিছনে তাকালাম । সে তখনো দাঁড়িয়ে আছে । দূর থেকে মনে হলো ছেলেটা হয়তো কাঁদছে । বৃষ্টির জল আর তার চোখের পানি মিলে মিশে একাকার ।
গলার কন্ঠস্বরটা অনেক পরিচিত মনে হলো । ক্ষনিকের জন্য মনে হলো এই স্বরটা আমার অনেক দিনের চেনা । খেয়াল করলাম তিন বছর পর বুকের বাম পাশে সেই ডিপ ডিপ আও্য়াজটা ফিরে এসেছে ।
২
বাস স্ট্যান্ডে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে বসে আছি । বাসের কোনো খোঁজ খবর নাই । রাস্তায় তেমন লোকজন নেই । বৃষ্টির জন্য রাস্তায় গাড়ির আনাগোনা ও কম । বাস স্ট্যান্ডও প্রায় ফাঁকা । খালার বাসায় যাবো । সে জন্যই বাস স্ট্যান্ডে বসে আছি । বাস স্ট্যান্ডে আসতেই আকাশ ভেঙ্গে ঝুম করে বৃষ্টি পড়া শুরু করলো । ইচ্ছা করছে বৃষ্টিতে ইচ্ছামতো ভিজি । একটা সময় ছিলো , যখন বৃষ্টি নামলেই ভেজার জন্য পাগল হয়ে যেতাম । কিন্তু এখন বৃষ্টিতে ভেজা সম্ভব না । তাই ইচ্ছাটাকে আপাতত দমিয়ে রাখতে হলো ।
মাঝে মাঝে দুই-একটা গাড়ি সাঁই সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে । আশে পাশে একটা সিএনজ়িও নেই । তাই কি আর করা , বসে বসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ।
৩
ঘাঁড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালাম । কিছুটা দূরে দাঁড়ানো লম্বা মতন একটা ছেলে আমার নাম ধরে ডাকছে । ছেলেটার পরনে ফুল-হাতা শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট । বৃষ্টিতে শার্টটা শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে । ভিজা চুলগুলো মুখের সামনে চলে আসায় ছেলেটার চেহেরা ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না । হঠাৎ মনে হলো , ছেলেটাকে দেখতে অয়নের মতো লাগছে । ছেলেটা একটু সামনে আসায় এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম ।
হ্যাঁ ,ছেলেটা অয়নই । ছেলেটার আগের চেয়ে একটু স্বাস্থ্য হয়েছে । চোখে চিকন ফ্রেমের চশমাটা নেই । কিন্তু আগের মতোই সেই মায়াবি চাহনি । ইচ্ছে করে যেন অনেকক্ষন ধরে তাঁকিয়ে থাকি ।
এতোদিন দিন পরে অয়নকে দেখবো কখনই ভাবিনি । মনে করেছিলাম হয়ত তার সাথে আর কখনো দেখাই হবে না । অয়নের কথা ভাবতেই তিন বছর আগের ক্যাম্পাস জীবনের পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো ।
৪
এমনি এক বৃষ্টির দিনে অয়নের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল । প্রতিদিন ভার্সিটির বাসেই বাসা থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করি । সেদিনও ভার্সিটির বাসেই বসে ছিলাম । জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখছিলাম । বাস ছাড়তে প্রায় ১০ মিনিটের মত বাকি । হঠাৎ মনে হলো পিছন থেকে আমার দিকে কেউ এক জন তাকিয়ে আছে । পিছন ফিরে দেখলাম চিকন ফ্রেমের চশমা পড়া একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ভাবলাম হয়তো এমনি তাকিয়ে আছে । ব্যাপারটাকে তেমন একটা পাত্তা দিলাম না । কিন্তু না , ছেলেটা প্রায় প্রতিদিনই আমি যে বাসে উঠতাম , ঠিক সে বাসেই উঠতো । আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো ।পরে জানতে পারলাম ছেলেটা আমাদের সাথে একই ব্যাচের , এপ্লাইড কেমিস্ট্রিতে পড়ে ।
কিছুদিন পর সে আমার এক বান্ধবীর হাতে একটা গোলাপ ফুল আর একটা চিঠি পাঠালো । চিঠিটাতে লেখা চার লাইনের কবিতা
আমার একটা স্বপ্ন ছিল্, মেঘনা নদীর ধারে
এক সাথে বসবো দুজন, তোমার হাতটি ধরে ,
সারাদিন জলকেলি আর রাজহংসির প্রেম
শুধু তোমায় নিয়ে সময় কাটাবো, ও হৃদয়ের মেম ।
ততদিনে ছেলেটার প্রতি আমার মায়া লেগে গেছে । তাই আর না করতে পারলাম না ।
এরপর থেকে শুরু হলো আমাদের দুজনের অন্য রকম, সুন্দর সময় শুরু হলো । কেন্টিন , লাইব্রেরি ,সেমিনার ক্যাম্পাসের এমন কোনো জায়গা বাকি ছিলো না, যেখানে আমরা একসাথে সময় কাটাই নি ।সারাদিন দুজনে অনেক গল্প করতাম । যেনো দুজন দুজনার অনেক দিনের চেনা ।
একদিন ঝুম বৃষ্টির দিনে অয়ন এসে আমাকে বলল
-সুর্বনা , চলো আজকে বৃষ্টিতে ভিজি ।
আমি মানা করলাম না । দুজন দুজনের হাত ধরে বাইরে নেমে পড়লাম । সেদিন পুরো ক্যাম্পাস অবাক হয়ে দেখেছিলো, দুইটা ছেলেমেয়ে হাত ধরা ধরি করে হাটছে আর পাগলের মতো বৃষ্টিতে ভিজছে ।
৫
অয়ন আমাকে জিজ্ঞেস করল
- কেমন আছো ?
- হুম … ভালো ।
- জিজ্ঞেস করবে না আমি কেমন আছি ?
- ও হ্যাঁ …তুমি আছো কেমন ?
- এইতো আছি কোনো রকম ।
- বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো ?
- আজকে আসলে ছাতাটা আনতে মনে ছিলো না ।
মনে হলো, গত তিন বছরে মানুষটা এতটুকু বদলায় নি । যে দিন বৃষ্টি হত , সেদিন ইচ্ছা করেই বৃষ্টিতে ভিজতো আর বলতো
-ছাতা হাতে নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে পারি না , তাই বৃষ্টিতেই ভিজি ।
৬
দেখতে দেখতে বাস চলে এলো । আমি অয়নের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে বাসে উঠে পড়লাম । বাসের জানালার পাশে বসে দেখলাম ছেলেটা তখনো বৃষ্টিতে ভিজছে । তাঁর মুখ দেখে মনে হলো হয়তো আমাকে আর কিছু বলতে চাচ্ছিলো ।
বাস ছেড়ে দিলো । অয়ন আর আমার মাঝে দুরত্বটা ক্রমশ বাঁড়ছে । আমি জানালার বাইরে মাথা দিয়ে পিছনে তাকালাম । সে তখনো দাঁড়িয়ে আছে । দূর থেকে মনে হলো ছেলেটা হয়তো কাঁদছে । বৃষ্টির জল আর তার চোখের পানি মিলে মিশে একাকার ।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ