প্রকৃতি কি এই অন্যায় নিরবে সহ্য করে? না। সে তো নীরব, কিন্তু অন্ধ নয়। সে দেখে—মানুষ কেমন করে খুন করে, নিপীড়ন চালায়, বিশ্বাসঘাতকতা করে, হিংসা ছড়ায়। প্রকৃতি হয়তো কাঁদে না, চিৎকার করে না—কিন্তু একসময় তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। তখন সে ঝড় হয়ে ওঠে—সিডর, আম্পান, ভূমিকম্প, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, বন্যা—সবই যেন মানুষের পাপের নিরব প্রতিক্রিয়া।
আজ প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়েছে—ঠিক যেমন মানুষ হারিয়েছে বিবেক। গ্রীষ্মে শীত, শীতে গ্রীষ্ম, আকাশের রঙে বিষন্নতা, বাতাসে গন্ধ নেই—সব মিলিয়ে প্রকৃতি যেন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে—“তোমরাই কি আমার নিয়ন্ত্রক? না আমি তোমাদের?”
এই বৈপরীত্য আর কাকতালীয় নয়। এটা মানুষ নামের জীবের লোভ, অবিচার, এবং সীমাহীন আত্মমোহের ফল। মানুষের মধ্যে এখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রার চেয়ে প্রতিযোগিতা, প্রতিহিংসা, এবং একে অন্যকে ঘায়েল করার কৌশলই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে আজ মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠছে—“মানুষ কি সত্যিই আশরাফুল মাখলুকাত?”
কখনো কখনো মনে হয়, সৃষ্টিকর্তাও হয়তো ভাবছেন—“আমি কেন এমন একটি জাতিকে সৃষ্টি করলাম, যারা ক্ষমতা আর লাভের জন্য সবকিছু ভুলে যেতে পারে?”( নাউজুবিল্লাহ—হে আল্লাহ, আমাদের ক্ষমা করো।)
সমস্যা হলো—আমরা নিজেদের ভুল বুঝি, তবু স্বীকার করি না। কাকে ঠকিয়ে কে বড় হবে, কাকে দমন করে কে ক্ষমতা পাবে, এসব হিসাবের মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছে সহানুভূতি, মায়া, ভালোবাসা। সত্য বললে কেউ পাশে দাঁড়ায় না, অথচ মিথ্যার রঙে রাঙানো কুকর্মীরা হয়ে ওঠে নায়ক।
তাই বলা যায়, প্রকৃতি আর সমাজ—দুটোরই ভারসাম্য আজ ভেঙে পড়েছে। একটি নষ্ট হলে অন্যটি তার প্রতিক্রিয়া দেয়। আর যদি আমরা এখনই না থামি, না বদলাই—তবে হয়তো একদিন প্রকৃতিই আমাদের চূড়ান্ত জবাব দিয়ে দেবে, এমনভাবে, যেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব।