শুক্রবার, জুন ২৭, ২০১৪

দলীয় নয়, জনগণ টু জনগণ সম্পর্ক চায় মোদি সরকার

ভারতের তরফে স্পষ্ট করে বলা হলো তারা ক্ষুদ্র দলীয় রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে দু’দেশের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে না। রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র। জনগণ টু জনগণের সম্পর্কই তাদের কাম্য। বরং ভারত আরও খোলাসা করে বলেছে, তারা একটি সার্বভৌম, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ দেখতে চায়। এখানকার জনগণ যে ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে ভারত তার সঙ্গেই কাজ করে যাবে। ঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায় আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন একাধিক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারত তো কংগ্রেস শাসনকালে দলীয় ভিত্তিতে সম্পর্ক নির্ধারণ করে এসেছে। নরেন্দ্র মোদির সরকার তাই করবে কিনা? পরিষ্কার জবাব দেন আকবর উদ্দিন। বলেন, ভারত কখনও দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয় না।
ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের তিন দিনের সফরের মাঝামাঝিতে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্মকর্তা যখন সংবাদ সম্মেলনে, তখন সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। অবশ্য দিনের শুরুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং দুপুরের কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে নেন দায়িত্ব নেয়ার পর ঢাকায় প্রথম আসা সুষমা স্বরাজ। মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার দিল্লির মসনদে আসীন হওয়ার রাজনৈতিক কোন ব্যক্তিত্বের এটি প্রথম বাংলাদেশ সফর। গুরুত্বপূর্ণ ওই সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন পররষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পরে ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত ব্রিফিংয়ে কথা বলেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। সংবাদ সম্মেলনের সূচনা বক্তৃতায় আকবর উদ্দিন বলেন, বিদায়ী সরকার দুই দেশের সম্পর্ক যে জায়গায় রেখে গেছে, নতুন সরকার এই সম্পর্ককে সেখান থেকে এগিয়ে নিতে চায়। তবে এটি অবশ্যই জনগণের পর্যায়ে। এ দেশের মানুষকে নিয়ে। সম্পর্কের বিষয়টি ‘ফ্রেশ গ্রাউন্ড’-এ দেখতে চায় নতুন সরকার। এ সময় তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও অংশীদার হতে প্রস্তুত। নতুন সরকার এ সম্পর্কে ‘নতুন মাত্রা’ দিতে চায়। ঢাকার সঙ্গে ‘ইতিবাচক’ ও ‘ক্রমবর্ধমান উন্নয়নমূলক’ সম্পর্ক গড়তে দিল্লি আশাবাদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুদেশের পারস্পরিক সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলতেও আগ্রহী ভারত সরকার। 
তিস্তা চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে মোদি সরকার তার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগাবে না কি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত বাংলাদেশকে অপেক্ষায় রাখবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আকবর উদ্দিন বলেন, এ নিয়ে ভারত সরকার দেশটির অভ্যন্তরে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে। ঢাকা সফরে আসার আগেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেছেন। সিনিয়র দুই রাজনীতিকের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা না জানালেও আকবর বলেন, সেখানে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়াদি ছিল বলে আমার ধারণা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের শুভ কামনা করেছেন। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ভারত কোন সন্ত্রাসীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। তাই নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এ সময় ভারতের নিরাপত্তা প্রশ্নে বাংলাদেশের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ভারত বিশ্বাস করে বাংলাদেশের মাটি ভারতের বিরুদ্ধে কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- বে্যবহার হবে না। এখন থেকে ১৩ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশীরা ভারতে ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা পাবেন। বাংলাদেশীদের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকারের কোন প্রস্তাব ছিল না জানিয়ে আকবর বলেন, অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়ার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশও ভিসা অন অ্যারাইভালের সুযোগ পাবে যখন এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। 
বাংলাদেশ-ভারত জ্বালানি সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ভারত প্রতিশ্রুত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে। ত্রিপুরার পালাটানা থেকে আরও ১০০  মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দেয়ার বিষয়ে সুষমা স্বরাজের সফরে ঐকমত্য হয়েছে বলে জানান তিনি। ভারত প্রস্তাবিত ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস চালুর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে বাংলাদেশের তরফে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী ট্রেন সার্ভিস বাড়ানো এবং এসি কমপার্টমেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আকবর উদ্দিন বলেন, শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের হাতে নকশা হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ১০০ তরুণকে ভারত সফরে নেয়া হবে। এসব কার্যক্রম দু’দেশের জনগণের ভাব বিনিময় ও পরস্পরের জানা-বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই বৈঠকের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ‘আঞ্চলিক সংযোগ’। এটি ‘মানুষে মানুষে সংযোগ, জ্বালানি সহযোগিতা, পরিবহন ও ধারণার বিনিময়’- চারটি অংশে ব্যাখ্যা করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে আকবর উদ্দিন বলেন, অবৈধ অভিবাসীসহ দু’পক্ষের যত উদ্বেগ ও সমস্যা রয়েছে তা উভয়ের বিবেচনায় রয়েছে। বিষয়টি আলোচনার টেবিলে এসেছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি এক কৌশলী জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ-মিয়ানমার ডেস্ক) শ্রী প্রিয়া রঙ্গনাথন ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের মুখপাত্র সুজিত ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। 
সুষমার বক্তব্যে আশাবাদী মাহমুদ আলী: দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঝুলে থাকা সমস্যাগুলো সমাধানে ভারতের নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে তিনিও ‘আশাবাদী’ বলে জানান। তিস্তা চুক্তি বা স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে কেবলই প্রতিশ্রুতি নাকি কোন সময়ক্ষণ পাওয়া গেছে এমন প্রশ্নে- মাহমুদ আলী বলেন, এসব বিষয়ে কারও কোন সময় নির্ধারণ করে দেননি সুষমা। কেবল ভারত নয়, যে কোন গণতান্ত্রিক কারণ রাষ্ট্রের জন্য এটি নির্ধারণ করে দেয়া কষ্টকর। মন্ত্রী জানান, অন্য ইস্যুর সঙ্গে বাংলাদেশে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করতে দেশটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখেছে বলে জানান তিনি। মাহমুদ আলী বলেন, বৈঠকের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সম্পর্ক রক্তের ঋণে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দুদেশের বন্ধুত্ব সময়োত্তীর্ণ মন্তব্য করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমার একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেন মাহমুদ আলী। বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত সর্বদা পাশে থাকবে। বাংলাদেশকে ভারত সব সময় গুরুত্ব দেয়। আমরা শুধু প্রতিবেশীই নই আমাদের বন্ধুত্ব আবেগের সঙ্গে সম্পর্কিত। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাজনীতি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ত্রিপুরায় ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য পরিবহনে ভারতকে সম্মতি দেয়ার বিষয়টি স্মরণ করেন তিনি। তবে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়নি কিংবা এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কোন আলোচনাও হয়নি বলে দাবি করে তিনি। বৈঠকে দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে এএইচ মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বহুমাত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর কার্যক্রমের বিষয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সন্ত্রাস দমনে তিনি বাংলাদেশের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার বিষয়ে ঐকমত্যের বিষয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয় বলে জানান মন্ত্রী। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের বিষয়ে মোদি সরকারের মনোভাব সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ‘সবাই এটি স্বীকার করে নিয়েছে’ বলে দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক করিমসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ: দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তরফে তাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর লেখা একটি চিঠি (আমন্ত্রণপত্র) হস্তান্তর করেন সুষমা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওই সাক্ষাতের পর তার প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী  সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পরে অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান। প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং দ্রুত সম্ভব ভারত সফর করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। বাংলাদেশ দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বলে সুষমাকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
৪০ ঘণ্টার শুভেচ্ছা সফরে বুধবার রাত পৌন ১টার দিকে ঢাকা মাটিতে পা ঢাকায় পা রাখেন সুষমা স্বরাজ। পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং, মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দীন, বিএম বিভাগের যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন। আজ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন সুষমা স্বরাজ। সবশেষ ঢাকা ছাড়ার আগে গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সুষমার সাক্ষাৎ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে প্রেসিডেন্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সুষমা স্বরাজকে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে আশা করেন তার ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে। দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে শুভেচ্ছা জানান। সুষমা স্বরাজ বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং, ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক এ করিম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণসহ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা-সুষমা বৈঠক আজ 
বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বৈঠক আজ। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সকাল সোয়া দশটায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বিএনপি চেয়ারপারসন ওই বৈঠকে যোগ দেবেন। বৈঠকের জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে হোটেল সোনারগাঁওয়ে একটি কক্ষ বুকিং দেয়া হয়েছে। বিএনপি সূত্র জানা গেছে, সুষমা স্বরাজকে উপহার দেয়ার জন্য জামদানি শাড়িসহ কিছু উপহার কিনেছেন খালেদা জিয়া। ৪০ ঘণ্টার সফরে সুষমা স্বরাজ বুধবার রাতে ঢাকা আসেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পরপরই সফরের সমাপ্তি টেনে ঢাকা ছেড়ে যাবেন তিনি। 
বাংলাদেশের উদ্বেগজনক ইস্যুগুলো সমাধানে অঙ্গীকার
বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক ইস্যুগুলো সমাধানে অঙ্গীকার করেছেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি বলেন, ভারত সরকার সমান অংশীদার হিসেবে এ ইস্যুগুলোকে এগিয়ে নেয়ার আকাঙক্ষা প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোটেল রূপসী বাংলার বলরুমে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডি (বিস)-এর আয়োজনে ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক: সহযোগিতার কাঠামো’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ অঙ্গীকার করেন।
গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সহনশীলতা ও বৈসাদৃশ্যের প্রতি সম্মানকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সুষমা বলেন, গত কয়েক দশকে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ইস্যুগুলোর উন্নতি হয়েছে। আমি অবগত আছি কিছু অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক। তিস্তার পানি, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও এর দলিলের খসড়া এবং উত্তম সীমান্ত ব্যবস্থাপনা অন্যতম। আমার সরকার বিষয়গুলো এমন একটি পদ্ধতিতে এগিয়ে নিতে চায় যেন দুই দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে- আমাদের প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এসব নিয়ে মিলিত হবেন। আমরা পরবর্তী যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমাদের মন্ত্রী ও সিনিয়র কর্মকর্তারা আলোচনা সামনের দিকে নিয়ে যাবেন। যৌথ নদী কমিশন এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।
সুষমা বক্তব্যের শুরুতে ১৬ বছর আগে তার বাংলাদেশ সফরের স্মৃতিচারণ করেন। বিভিন্ন সময়ে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় তিনি উল্লেখ করেন। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় সম্পর্ক নবায়নে সহায়ক হবে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সরকার গঠনের পর প্রথম সফরে বাংলাদেশে হওয়ায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করছে।
সুষমা তার বক্তব্যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু মহান ব্যক্তির অবদানের কথা স্বরণ করেন। এদের মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, কাজী নজরুল ইসলাম, ড. শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমি এসেছি বন্ধুত্ব ও মঙ্গল বার্তা নিয়ে। আমি এসেছি আমাদের সম্পর্ক ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার উন্নয়নের জন্য।
ভারতের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জেনেছি বাংলাদেশ ভারতের নির্বাচন অত্যন্ত কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছে। আমি তাদের সকল অভিনন্দনের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই নির্বাচনগুলো বিশ্বে শুধুই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক অনুশীলন নয়। এটা ভারতের গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারের জন্য একটি মোড়। এটা ছিল প্রত্যাশার নির্বাচন। আমি এমন একটি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছি যারা একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। যেখানে ৩০ বছর পর একটি একক দলের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে। 
প্রতিবেশী দেশসমূহের সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশীদের কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও  সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীতি-নির্ধারণ করবো। আমাদের নীতির অনন্য নিদর্শন হিসেবে গত ২৬শে মে শপথ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশীয় দেশসমূহের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর অংশগ্রহণ দুই দেশের আশা-আকাঙক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে এবং সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুই দেশের হাতকে এক করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সীমান্তে অপরাধ দমনে বাংলাদেশের সহযোগিতার প্রশংসা করে দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক স্থাপনে এটি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, গওহর রিজভী প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিস-এর চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ।
মোদি বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন
শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ
পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার এক সরকারি বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এদিনই ঢাকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে  সৌজন্য সাক্ষাৎকারের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একটি চিঠি তুলে দেন। সেই চিঠিতেই নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সুবিধা মতো সময়ে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।  মোদির শপথ গ্রহণ উপলক্ষে শেখ হাসিনা যে শুভেচ্ছা চিঠি তার প্রতিনিধি হিসেবে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর হাত দিয়ে পাঠিয়েছিলেন সে জন্য মোদি ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন প্রত্যেক দেশের ভালমন্দ প্রতিবেশীর সঙ্গে নিকট সম্পর্কযুক্ত। আর এই জন্যই ভারত প্রতিবেশীর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরিতেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মোদি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশ শুধু ভারতের নিছক এক প্রতিবেশীই নয়। বরং বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার এবং মানুষের দীর্ঘস্থায়ী যোগ রয়েছে। নরেন্দ্র মোদি মনে করেন, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ, বহুত্ববাদ এবং আইনের শাসনই দুই দেশের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেছে।  শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের কাঠামোকে আরও শক্তিশালী এবং আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা আরও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আমার সরকার কাজ করবে। শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে মোদি জানিয়েছেন যে, আমরা যদি সকলে একত্রে কাজ করি তাহলে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে সহযোগিতা ও সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করা সম্ভব হবে। আর এর ফলে আমাদের সামগ্রিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটবে।