সোমবার, জুন ৩০, ২০১৪

অস্ত্র-লগ্নির মধু খুঁজতে মোদীর কাছে!

প্রথমে রাশিয়া। সোমবারই ফ্রান্স। খুব শীঘ্রই আমেরিকা ও ব্রিটেন।
একের পর এক রাষ্ট্রনেতাদের বিমান দিল্লির পথ ধরছে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর নতুন সরকারের সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্বটা ঝালিয়ে নিতে চান সকলে। এই সব সফরের প্রধান লক্ষ্য, ভারতের সমরাস্ত্র ও নতুন প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বাজার ধরা। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দিতে চায় মোদী সরকার। পাশাপাশি, মনমোহন-জমানায় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে একাধিক চুক্তি আটকে ছিল। অরুণ জেটলির নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এ বার সেই সব চুক্তিতেও সিলমোহর দিতে চাইছে। সমরাস্ত্র সরবরাহের বরাত পেতে এবং ভারতে প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন সুযোগের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় সব দেশই তৎপর হয়ে উঠেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হিসেব, গত এক দশক ধরে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সমরাস্ত্র কেনার চুক্তি আটকে রয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বড় অঙ্কের চুক্তি হল ২ হাজার কোটি ডলারের ১২৬টি বহুমুখী যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত। একই যুদ্ধবিমান দিয়ে আকাশ পথে হামলা, নজরদারি, সমুদ্রের উপর নজরদারি এবং ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রুখে দেওয়ার জন্য এই যুদ্ধবিমান কিনতে চায় ভারত। প্রায় দু’বছর ধরে ফরাসি সংস্থা ডাসল্ট-এর তৈরি রাফায়েল বিমান কেনার বিষয়ে দর কষাকষি চলছে। মোদী জমানায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চুক্তির সইসাবুদ সেরে ফেলতে চাইছে।
ফ্রান্সের দিক থেকেও একই ভাবে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সোমবারই দিল্লি আসছেন ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী লরেন্ট ফ্যাবিয়াস। নরেন্দ্র মোদী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ফ্যাবিয়াসের সফরে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে যুদ্ধবিমান চুক্তিই। পরের সপ্তাহে দিল্লিতে আসছেন মার্কিন সেনেটর জন ম্যাককেইন। যিনি মার্কিন সেনেটে বলেছেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি দিয়ে ভারতকে সাহায্য করতে পারে। ভারত তার সামরিক বাহিনীকে অত্যাধুনিক করে তুলতে চাইছে। দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতায় দু’দিকের প্রতিরক্ষা শিল্পই লাভবান হবে বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। ম্যাককেইন যে কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন, সেই অ্যরিজোনাতেই বোয়িং, রেথেওন-এর মতো সংস্থার সদর দফতর। তাঁর সফরের পিছনে স্থানীয় রাজনীতির অঙ্কও কাজ করছে। মার্কিন সেনেটরের পরে ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এবং অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্নও ভারতে আসতে পারেন। এদের সকলের আগে দিল্লি এসে ঘুরে গিয়েছেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি রোগোজিন। ডলারের অঙ্কে রাশিয়াই এত দিন ভারতের সব থেকে বড় সমরাস্ত্র সরবরাহকারী দেশ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকা তাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। ভারত যখন ১০ হাজার কোটি ডলারের সমরাস্ত্র কেনার চুক্তি চূড়ান্ত করার পথে, তখন কোনও দেশই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকতে চাইছে না।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, সমরাস্ত্র, যুদ্ধবিমান বা অন্যান্য সরঞ্জামের ক্ষেত্রে মোদী সরকার নীতির বদল চাইছে। গত বছর ভারত প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও সমরাস্ত্র আমদানি করেছিল। অন্য দেশের উপর এই নির্ভরতা কমাতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, সমরাস্ত্র আমদানির বদলে ভারত নিজেই তা তৈরি করুক। ভারত নিজেই বড় মাপের সমরাস্ত্র নির্মাণকারী দেশ হয়ে উঠুক। কিন্তু শুধু দেশীয় লগ্নি বা প্রযুক্তির মাধ্যমে তা হওয়ার নয়। সেই কারণেই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বিদেশি রাষ্ট্রনেতারাও এই বিষয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে চাইছে। বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দিলে বহুজাতিক প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির সামনে এ দেশে লগ্নির সুযোগ তৈরি হবে। বিদেশি সংস্থাগুলি এখন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত লগ্নি করতে পারে। কিন্তু বহু বিদেশি সংস্থাই এর ফলে পিছিয়ে গিয়েছে। বিদেশি সংস্থাগুলি মনে করছে, অন্তত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়পত্র দেওয়া উচিত। বাণিজ্য মন্ত্রক আলোচনার জন্য যে খসড়া নোট তৈরি করেছে, তাতে অত্যাধুনিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ বিদেশি লগ্নিরই ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেখানে বিদেশি সংস্থাগুলি দেশীয় সংস্থাগুলিকে কোনও প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করবে না, সেখানে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নি আসতে পারবে। প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করলে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির অনুমতি থাকবে।