শুক্রবার, জুন ২৭, ২০১৪

সরকার ও জঙ্গিদের জাঁতাকলে ইরাকিরা

শরণার্থী শিবিরে এক ইরাকি শিশু। সহিংসতার কারণে নিজ শহর তাল আফার ছেড়ে এসেছে সে। এখানেই কাটছে শৈশব। ছবি: এএফপিঘরের বাইরে প্রাকৃতিক কাজ সারছিলেন এক প্রতিবেশী। হঠাত্ একটা গোলা এসে কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ। আর তা দেখে কেঁপে উঠল ইরাকি তরুণী আমশার প্রাণ।
এ ঘটনায় শুধু তিনি নন, গোটা পরিবার উত্তরাঞ্চলীয় ইরাকি শহর তাল আফার ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। ২৪ বছর বয়সী ওই সুন্নি তরুণী এখন পরিবারের আট সদস্যের সঙ্গে কুর্দি-অধ্যুষিত দহুক প্রদেশের জারমাওয়া শরণার্থী ক্যাম্পের একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন।
সেখানে বসে শহর দখলে নিতে ইরাকি সেনাদের সঙ্গে সুন্নি জঙ্গিদের ভয়াবহ সংঘর্ষের দৃশ্য দেখেছেন তিনি। চলমান এ দুর্গতির জন্য শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায়কেই দায়ী করেছেন আমশা। অশ্রুসজল আমশা বলেন, ‘আমরা মাঝখানে আটকা পড়ে আছি। জঙ্গিদের আমরা দেখতে পাচ্ছি না। দেখছি কেবল সেনাবাহিনীর গোলা আর বিমান হামলা।’
ইরাকি নেতা নুরি আল মালিকিকে অভিশাপ দিয়ে আমশা বলেন, এই শিয়া নেতা আসলে কোনো কাজের নয়। নিজ সম্প্রদায়ের সুন্নি নেতাদের ওপরও তাঁর কোনো আস্থা নেই বলে জানান।
আমশা বলেন, ‘আমরা চার ঘণ্টা হেঁটে তাল আফার ছেড়েছি। এখন নয়জন মিলে একটি তাঁবুতে আছি। এই প্রচণ্ড গরমেও এখানে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার চেষ্টা করছি।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘কোথায় তাল আফারের রাজনীতিকেরা, যাঁরা নির্বাচনের জন্য আমাদের ভোট চাইতে আসতেন? তাঁরা এখন আরবিলে (কুর্দি-অধ্যুষিত ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত একটি অঞ্চলের রাজধানী) আছেন।’
আরবিল বর্তমানে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (আইএসআইএল) জিহাদি বলে পরিচয় দেওয়া জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে। আরবিল ছাড়াও বাগদাদের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় পাঁচটি প্রদেশ এখন জিহাদিদের দখলে। তাই নিদারুণ যন্ত্রণায় এখন আমশাদের মতো তরুণীদের প্রতিটি দিন কাটাতে হচ্ছে। আর সেখানকার নেতারা আছেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
বিষয়টির উল্লেখ করে আমশা বলেন, ‘তাঁরা (রাজনৈতিক নেতা) পরিবার নিয়ে নিরাপদে আছেন। কেউ কেউ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন।’
আমশা এএফপিকে জানান, তিনি আট দিন ধরে ক্যাম্পে আছেন। এক গভীর রাতে পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, ‘গোলার আওয়াজে আমরা পাগল হয়ে যাচ্ছি। মাথার ওপর সেনাদের বিমান ঘুরছে। জানি না, কখন কোথায় গোলা ছোড়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এক প্রতিবেশী টয়লেটে যাওয়ার সময় গোলার আঘাতে নিহত হয়েছে। আমরা ঘুমাতে পারছি না। কারণ আমরা জানি না, ঘুমালে আরেকবার জাগতে পারব কি না।’ আমশা বলেন, ইতিমধ্যে ইরাকি সেনারা যুদ্ধ ঘোরতর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের শহর ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বিষয়টির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা রাত নয়টায় রওনা দিই। হেঁটে আমরা শহর পাড়ি দিয়েছি। আমরা বের হওয়ার সময় ইরাকি সেনারা শূন্যে গুলি ছুড়ছিল। এতে আমাদের কয়েকজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’