ক্লামাইডিয়া পুরুষের অতি সাধারণ যৌনবাহিত সংক্রমণ। অনেক পুরুষ সচরাচর জানেন না তাদের ক্লামাইডিয়া সংক্রমণ রয়েছে, কারণ তাদের কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। যা হোক, ক্লামাইডিয়া মহিলা যৌন সঙ্গিনীকে সংক্রমিত করতে পারে এবং মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায় এ জটিলতা সৃষ্টি করে। নবজাতক শিশুরাও এই জটিলতার শিকার হয়।
কীভাবে সংক্রমণ ঘটে?
যে জীবাণুটি সংক্রমণ ঘটায় তা রনাম ক্লামাইডিয়া ট্রাকোমাটিস। এই জীবাণুগুলো ব্যাকটেরিয়ার মতো একই ধরনের। সংক্রমণ সাধারণত যৌন সঙ্গমের সময় একজনের কাছ থেকে আরেক জনের কাছে ছড়ায়। এগুলো অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য পায়ু এলাকায়ও হতে পারে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে ক্লামাইডিয়া সাধারণত মূত্রনালীকে সংক্রমিত করে। মূত্রনালী হচ্ছে একটা নল যা পুরুষাঙ্গের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। মূত্রনালীর মধ্য দিয়ে প্রস্রাব ও যৌন রস (বীর্ষ) বেরিয়ে যায়। মূত্রনালীর সংক্রমণকে বলে ইউরেথ্রাইটিস।
ক্লামাইডিয়া এপিডিডাইমিস কিংবা প্রোস্টেট গ্রন্থিকেও সংক্রমিত করতে পারে। এপিডিডাইমিস হলো একটি ছোট গ্রন্থি যা অন্ডকোষের সাথে সংযুক্ত থাকে। এটা শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রোস্টেট গ্রন্থি থাকে পুরুষাঙ্গের গোড়ায়। এটা শুক্রাণুর জন্য পুষ্টি উপাদান তৈরি করে। এপিডিডাইমিসের সংক্রমণকে বলে এপিডাইমাইটিস। প্রোস্টেটের সংক্রমণকে বলে প্রোস্টেটাইটিস।
পায়ুপথে সঙ্গম করলে মলদ্বার এবং মলনালীও সংক্রমিত হতে পারে।
উপসর্গগুলো কী কী?
সচরাচর কোনো উপসর্গ থাকে না। যদি মূত্রনালী সংক্রমিত হয় তাহলে আপনার এসব উপসর্গ থাকতে পারে :
০ পুরুষাঙ্গের মাথা থেকে রস নিসৃত হওয়া
০ প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করা
০ এপিডিডাইমিস সংক্রমিত হলে অনডকোষে ব্যথা করে
০ প্রোস্টেট গ্রন্থি সংক্রমিত হলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় সেসব হচ্ছে:
০ মূত্রনালী থেকে নিঃসরণ
০ প্রস্রাব করার সময় কিংবা প্রস্রাব করার পর ব্যথা বা জ্বালাপোড় করা অথবা অস্বস্তি বোধ করা
০ যৌন সঙ্গমের সময় কিংবা যৌন সঙ্গমের পরে ব্যথা করা
০ পিঠের নিম্নভাগে বা কোমরে ব্যথা করা।
কখনো কখনো প্রোস্টেট কিংবা এপিডিডাইমিসের সংক্রমণ হঠাৎ ও তীব্র হয়। এ ধরনের সংক্রমণের ফলে জ্বর হয় অথবা অসুস্থতার অন্য লক্ষণগুলো দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
পায়ুপথ সংক্রমিত হলে যেসব উপসর্গ দেখা দেয়
০ পায়ুপথের চারপাশে জ্বালাপোড়া করা
০ পায়খানা করার সময় ব্যথা করা
কীভাবে রোগ নির্ণয় করবেন?
রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। মূত্রনালীর সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য মূত্রনালীর মুখের নিঃসরণ পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গের মাথায় মূত্রনালীর মুখে একটা সরু সোয়াব ঢোকানো হয়। ক্লামাইডিয়ার জন্য আপনাকে একটা প্রস্রাবের পরীক্ষাও করানো হতে পারে। যদি আপনার পায়ুপথে উপসর্গ থাকে তাহলে আপনার পায়ুপথের নিঃসরণ পরীক্ষা করাতে হবে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে আপনার সংক্রমণে কী এবং কোন অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয়ে ভাল কাজ করবে। তবে সচরাচর এপিডিডাইমিস ও প্রোস্টেট গ্রন্থির সংক্রমণের জন্য দায়ী জীবাণুকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
কী চিকিৎসা দেবেন?
সাধারণত সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণে সংক্রমণ সেরে যায়। বেশিরভাগ মূত্রনালীর সংক্রমণে সাত দিন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের প্রয়োজন। কখনো কখনো একক মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সংক্রমণের চিকিৎসা করা যেতে পারে। প্রোস্টেট গ্রন্থির সংক্রমণের জন্য ২ থেকে ৪ সপ্তাহ চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।