বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন ব্রাজিলের সুপারস্টার নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়র। তার পায়ে সাম্বার শৈল্পিক ছন্দ ফুটে উঠছে। গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে তার নান্দনিক দুই গোলের সহায়তায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। তিন ম্যাচে ইতিমধ্যে চার গোল করে তিনি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। নেইমারকে ঘিরেই ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর ব্রাজিল।
তবে ফর্মের চূড়ায় থাকা নেইমারকে নিয়ে ব্রাজিল শিবিরে কিন্তু দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। গ্রুপ পর্যায়ের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হলুদ কার্ড দেখেছেন তিনি। আর তাই তার কোয়ার্টার ফাইনাল কিংবা সেমিফাইনালে খেলতে না পারার আশঙ্কা রয়েই গেছে।
বিশ্বকাপে লাল কার্ডের পরিণতি সব ফুটবল দর্শকেরই মোটামুটি জানা। কোনো খেলোয়াড় যে ম্যাচে লাল কার্ড দেখবেন পরবর্তী ম্যাচ অবশ্যই নিষিদ্ধ হবেন। তবে কোনো ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখলে টুর্নামেন্টে তার ফল কী হবে, তা অনেকেই জানেন না।
২০১০ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত কোনো খেলোয়াড় গ্রুপ পর্যায়ের একটি ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখে থাকলেও অন্যান্য ম্যাচে হলুদ কার্ড না দেখলে নক আউট পর্যায়ে নতুন করে শুরু করতে পারতেন। অর্থাৎ নক আউট পর্যায়ের আগের কার্ডগুলো মুছে যেত। তবে কোনো খেলোয়াড় গ্রুপ পর্যায়ের শেষ দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখলে দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় তিনি মাঠে নামতে পারতেন না।
আবার নক আউট পর্যায়ে পর পর দুই ম্যাচ হলুদ কার্ড দেখলে দল জয়ী হলেও তিনি তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামতে পারতেন না। অর্থাৎ কোনো খেলোয়াড় দ্বিতীয় রাউন্ড ও কোয়ার্টার ফাইনালে হলুদ কার্ড দেখলে সেমিফাইনালে কিংবা কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে হলুদ কার্ড দেখলে ফাইনালে নিষিদ্ধ হতেন। একই নিয়মের কারণে দ্বিতীয় রাউন্ড ও এক ম্যাচ বাদ দিয়ে সেমিফাইনালে হলুদ কার্ড দেখলেও ফাইনাল মিস করতে হতো তাকে।
২০০২ সালের আগ পর্যন্ত বিশ্বকাপে হলুদ কার্ডের এ নিয়ম নিয়ে কারো তেমন মাথাব্যথা ছিল না। তবে সেবার জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে নক আউট পর্যায়ের দুই ম্যাচে হলুদ কার্ডের ফলে ব্রাজিলের বিপক্ষে ফাইনালে মাঠে নামতে পারেননি ফর্মে থাকা জার্মান স্ট্রাইকার মাইকেল বালাক। সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়া মাঠে নেমে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে শিরোপা বঞ্চিত হয় জার্মানি। আর এতেই বিশ্বকাপে ফিফার হলুদ কার্ডের নিয়ম নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সমালোচনার মুখে ২০১০ সালের বিশ্বকাপ থেকে হলুদ কার্ডের নতুন নিয়ম চালু করে ফিফা। এতে নক আউট পর্যায়ের পরপর দুই ম্যাচে হলুদ কার্ডের ফাঁদে পড়ে কোনো খেলোয়াড় যেন ফাইনাল মিস না করেন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
তবে নতুন নিয়ম যে নক আউটে ওঠা দলগুলোর জন্য খুব স্বস্তিদায়ক হয়েছে, তা কিন্তু নয়। বরং পুরোনো ক্ষত সারাতে গিয়ে ফিফা আসলে নতুন ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
নতুন নিয়ম অনুসারে, কোয়ার্টার ফাইনালের পর থেকে খেলোয়াড়দের আগের সব কার্ড মুছে যাবে। অর্থাৎ কোনো খেলোয়াড় কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে হলুদ কার্ড দেখলেও তিনি ফাইনাল মিস করবেন না।
তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, কোনো খেলোয়াড় গ্রুপ পর্যায়ের কোনো ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখার পর কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত কোনো ম্যাচে ফের হলুদ কার্ড দেখলে পরবর্তী ম্যাচ মিস করবেন। সে ক্ষেত্রে কেবল দুই হলুদ কার্ডের কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নক আউট পর্যায়ে নিষিদ্ধ হওয়ায় ফাইনালে ওঠার আগেই তার দলের বিদায় হয়ে যেতে পারে।
তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, কোনো খেলোয়াড় গ্রুপ পর্যায়ের কোনো ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখার পর কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত কোনো ম্যাচে ফের হলুদ কার্ড দেখলে পরবর্তী ম্যাচ মিস করবেন। সে ক্ষেত্রে কেবল দুই হলুদ কার্ডের কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নক আউট পর্যায়ে নিষিদ্ধ হওয়ায় ফাইনালে ওঠার আগেই তার দলের বিদায় হয়ে যেতে পারে।
নেইমারের কথাই ধার যাক, তিনি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হলুদ কার্ড দেখেছেন। এখন ব্রাজিল যদি সেমিফাইনালে ওঠে এবং সেই যাত্রাপথে নেইমার কোনো ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখেন, তবে পরবর্তী ম্যাচে তাকে ছাড়াই ব্রাজিলকে মাঠে নামতে হবে।
সে হিসাবে নেইমার দ্বিতীয় রাউন্ডে চিলির বিপক্ষে হলুদ কার্ড দেখলে কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নামতে পারবেন না। কিংবা দ্বিতীয় রাউন্ডে এড়িয়ে গেলেও কোয়ার্টার ফাইনালে হলুদ কার্ড দেখলে সেমিফাইনালে সাইড বেঞ্চে বসে থাকতে হবে তাকে।
দলের প্রাণভোমরা নেইমারকে ছাড়া মাঠে না নামতে চাইলে তিনি যেন কোয়ার্টার ফাইনালের আগে আর হলুদ কার্ড না দেখেন সে প্রার্থনাই করতে হবে ব্রাজিলকে।