সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের কার কত টাকা আছে- তা বের করতে আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা দুর্নীতির টাকায় কানাডার বেগমগঞ্জে বাড়ি বানিয়েছেন। মানি লন্ডারিংয়ের টাকা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লন্ডনে পাচার করেছেন। এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, সুইস ব্যাংকের বাংলাদেশীদের টাকার তদন্ত করে তালিকা প্রকাশ করবেন। আমরা বলতে চাই, আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কার কত টাকা আছে তা বের করা হোক। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কমিশনার চৌধুরী আলম গুমের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে শাহবাগ থানা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান। মির্জা আলমগীর বলেন, সুইস ব্যাংকের টাকার ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য আমরা আওয়ামী লীগকে বলবো না। কারণ সুইস ব্যাংকে আওয়ামী লীগের লোকেদের সবচেয়ে বেশি টাকা রয়েছে। তারা এর তদন্ত করলে সত্য বের হবে না। ‘চৌধুরী আলমকে র্যাবই গুম করেছে’ অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, চৌধুরী আলমকে যে র্যাব গুম করেছে তার যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। কারণ, ২০১০ সালের ২০শে জুন গুলশানে দু’জন লোক চৌধুরী আলমকে আটকের চেষ্টা করেছিলেন। পরে পুলিশ তাদেরকে আটক করে গুলশান থানায় নিয়ে যায়। তখন র্যাব হেডকোয়ার্টার থেকে লোক তাদের র্যাব সদস্য শনাক্ত করে নিয়ে যায়। এরপর ২৫শে জুন ফার্মগেটের রাজাবাজার র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে চৌধুরী আলমকে তুলে নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত আমরা তাকে খুঁজে পাইনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, চৌধুরী আলম গুম হওয়ার পর বিএনপি যথাযথ আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় একের পর এক নেতাকে গুম করা হচ্ছে। প্রথম থেকে গুমের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে, প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হতো। দুর্ভাগ্য, আমরা সেই আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি। গুমের ভয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন তারাও ভীত হয়ে পড়েছেন। ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে গুমের রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন’ মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা শুনলে গা শিউরে ওঠে। সেই শামীম ওসমানের পক্ষে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিরপুরের কালশীতে শবেবরাতে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে ৯ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনার এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর এর বিচার হবেও না। কারণ ওই ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজনই জড়িত। ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশের অবস্থা এ রকম হবেই। মহানগর নেতাকর্মীদের গুম-খুনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড নেতাকর্মীর নামে মামলা রয়েছে। তবুও তাদের জেগে উঠতে হবে। গুম-খুন প্রতিরোধ করতে প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় দুর্ভেদ্য সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা হলো লুণ্ঠনের বাজেট। লুটপাট করার জন্য তারা বাজেট দিয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেন, গৃহপালিত বিরোধী দল নিয়ে একটি কিম্ভূতকিমাকার সংসদ গঠন করেছে। কিন্তু এদেশের মানুষ বোকা নয়। তারা ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছে। যে কোন সময় এই সরকারের বিরুদ্ধে জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সমাবেশে চৌধুরী আলমের বড় মেয়ে মাহমুদা আক্তার মনিকা বক্তব্য দিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, বাবাকে তো হারিয়েছি। আমরাও নিরাপত্তাহীনতায় আছি। কেউ যেন আমার বাবার মতো অপহৃত না হন। মনিকা বলেন, আমার বাবা এখনও ফিরে আসেনি। আমরা বাবার অপেক্ষায় আছি। আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। এছাড়া সমাবেশে চৌধুরী আলমের স্ত্রী হাসিনা চৌধুরী, ছোট মেয়ে মাহফুজা আক্তার, ছোট ভাই খোরশেদ আলম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন। শাহবাগ থানা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাসান তালুকদার ননীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আবুল বাশার, নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।