সাকিব তনু:নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরা। প্রতি সপ্তাহেই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন তারা। এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি রয়েছেন বিকাশের এজেন্টরা। নিরাপত্তাহীনতার এ শঙ্কা দূর করা না হলে এজেন্টরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে সেবাটি। যদিও এরই মধ্যে সেবাটির গ্রাহক কমে আসার তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে। এর পাশাপাশি রাজধানীতেও প্রায়ই মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। গতকালও উত্তরায় বিকাশের এক এজেন্টকে গুলি করে ১১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আহত মো. শাহিন নামে একজনকে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া গত মঙ্গলবার খিলগাঁওয়ে ছানাউল্লাহ নামে এক বিকাশ এজেন্টের ৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। একই ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবারও। রামপুরায় এদিন ইরান মুন্সী নামের একজনকে গুলি করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ইরান মুন্সী রামপুরা এলাকার স্কাই ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও বিকাশ এজেন্ট।
রাজধানীর বাইরেও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন বিকাশ এজেন্টরা। গতকালও মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় আতোয়ার হোসেন ও আবদুল আলীম নামে বিকাশের দুই এজেন্টকে কুপিয়ে ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ২৭ এপ্রিল বরিশালের বিকাশ এজেন্ট সাদ এন্টারপ্রাইজের কর্মীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ১২ লাখ টাকা নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। ১১ মে মাদারীপুরে বিকাশ এজেন্টের ১৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ১০ জুন ঝালকাঠিতে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করা হয় ২৮ লাখ টাকা। এভাবে প্রায়ই দেশের কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন মোবাইল এজেন্টরা। অনেক এজেন্টকেই এতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। ভয়ে অনেকের পেশা বদলের ঘটনাও ঘটছে।
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এজেন্টের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। ফলে এ সেবা প্রসারের পরিবর্তে সংকুচিত হবে। তবে আমরা ডিলারদের জন্য বীমা সুবিধা করেছি। এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, এজেন্টদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা বন্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।’
জানা গেছে, প্রতিটি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের প্রতিদিন লেনদেনের সীমা বেঁধে দিলেও অনেকেই তা মানছেন না। এ কারণে তাদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ জমা পড়ছে। এ কারণেও অনেক সময় ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন এজেন্টরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিকাশ, ডাচ্-বাংলা ও ইউক্যাশের এক এজেন্ট বলেন, ‘তিনটি প্রতিষ্ঠানের সেবা দিয়ে থাকি। জমার পরিমাণটাও তাই বেশি হয়। কিন্তু জমা হওয়া অর্থ নিয়ে সবসময়ই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। একবার ছিনতাই হয়ে গেলে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। এ কারণে অন্য কোনো ব্যবসার কথা ভাবছি।’
মোবাইল ব্যাংকিং বিভাগের কর্মীরা বলছেন, কারো অর্থ ছিনতাই হলে ব্যাংকের কিছুই করার নেই। তবে এজেন্টরা নিয়ম মেনে প্রতিদিন ব্যাংকে অর্থ জমা করলে এ সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২৮টি ব্যাংককে এ সেবা প্রদানের অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ব্যাংক সেবাটি চালু করলেও সবচেয়ে বেশি গ্রাহক ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও ডাচ্-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের। তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে সেবাটির সিংহভাগ। সাম্প্রতিক সময়ে ইউসিবিএল, ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক এ সেবা বিস্তারে জোর দিলেও সেভাবে গ্রাহক ধরতে পারেনি। এ পর্যন্ত ১ কোটি ৫৪ লাখ গ্রাহক এ সেবায় যুক্ত হয়েছে। আর এজেন্টসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ২৬ হাজার। ২০১২ ও ২০১৩ সালে যে হারে এ সেবার প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, বর্তমানে তা ঋণাত্মক হয়ে গেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে সচল অ্যাকউন্টের সংখ্যা এর আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ কমে ৫৭ লাখ ৬৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে।