বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০১৪

সব মামলা শেষ করতে লাগবে ১৪৫ বছর!

news_imgযুদ্ধাপরাধের দায়ে এ পর্যন্ত দায়ের করা ৫৭৭টি মামলা মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বর্তমান কাঠামো দিয়ে নিষ্পত্তি করতে লাগবে কমপক্ষে ১৪৫ বছর৷ এ কারণেই প্রয়োজন ট্রাইব্যুনাল এবং জনবল বাড়ানো৷
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে জানান, সারা দেশে এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ৫৭৭টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১২, চট্টগ্রামে ৮৪, রাজশাহীতে ৬৬, খুলনায় ১৮৪, সিলেটে ৫০ এবং বরিশালে ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে৷ কিন্তু এ সব মামলা তদন্ত ও নিষ্পত্তির কোন পর্যায়ে আছে তা জানাননি আইনমন্ত্রী৷
২০১০ সালের ২৫শে মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ন’টি মামলায় ১০ জনকে দণ্ড দেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে মাত্র একটি মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। আর সাতটি মামলা আপিল বিভাগে রয়েছে৷ আপিল বিভাগে শুনানি শেষ হয়েছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার৷ এটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ আছে৷ দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন: সাবেক জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, আশরাফুজ্জামান এবং চৌধুরী মঈনুদ্দিন পলাতক থাকায় তার হয়ে আপিল করা হয়নি৷
ট্রাব্যুনালে এখন তিনটি মামলার বিচার চলছে৷ এই তিনটি মামলার আসামি হলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস সোবহান এবং সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার৷ মঙ্গলবার মতিউর রহমান নিজামীর রায় না হওয়ার এখন সেটা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ আছে৷ এছাড়া ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী সংস্থা আরো তিনিটি মামলার তদন্ত করছে বলে জানা গেছে৷
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রাণা দাসগুপ্ত জানান, “একটি ট্রাইব্যুনাল বছরে সর্বোচ্চ দুটি মামলার বিচার কাজ শেষ করতে পারে। সেই হিসেবে দুটি ট্রাইব্যুনালের পক্ষে বছরে চারটির বেশি মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব নয়৷ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর গত চার বছরে নয়টি মামলার নিষ্পত্তি করেছে দু’টি ট্রাইব্যুনাল৷”
তিনি বলেন, ‘‘যদি গাণিতিক হিসাব করা হয়, তাহলে যুদ্ধাপরাধের ৫৭৭টি মামলা ট্রাইব্যুনালের নিষ্পত্তি করতে কমপক্ষে ১৪৫ বছর লাগবে৷” তবে বাস্তবে এই সময় আরো বেশি হবে বলে জানান তিনি৷ কারণ মামলার বিচারে আসার আগে তদন্তসহ আরো কাজ রয়েছে৷
রাণা দাসগুপ্ত জানান, দুই ট্রাইব্যুনালে এখন ১৭ জন প্রসিকিউটর এবং চারজন বিচারক আছেন৷ তার কথায়, ‘‘ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা এখন বাড়ানো দরকার৷ ভালো হতো যদি প্রত্যেক বিভাগে ট্রাইব্যুনাল খোলা যেত৷ কিন্তু ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা যেহেতু হাইকোর্টের বিচারক, তাই বিভাগীয় শহরে ট্রাইব্যুনাল করা সম্ভব নয়৷”
ট্রাইব্যুনালের প্রধান তদন্তকারী সানাউল হক জানান, ‘‘আমরাও মনে করি এতগুলো মামলার তদন্ত শেষ করতে বছরের পর বছর লাগবে৷ কারণ তাদের মাত্র ১৪ জন তদন্ত কর্মকর্তা আছেন৷”
তিনি বলেন, এ জন্য তারা লোকবল চেয়ে আবেদন করেছেন৷ লোকবল হিসেবে ২৭৯ জনের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷ তাই তাদের নিয়োগ দেয়া হলে তদন্তে গতি আসবে৷
তবে সানাউল হক মনে করেন, ‘‘৫৭৭টি মামলার প্রাথমিক তদন্ত শেষ করতে পারলে তারা বুঝতে পারবেন আসলেই কত সময় লাগবে৷”
তার ধারণা, ‘‘এর মধ্যে বেশ কিছু মামলা প্রাথমিক পর্যায়েই বাতিল হয়ে যাবে। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন এবং বিচারের প্রয়োজন পড়বে না৷”
তিনি জানান, ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে গত চার বছরে তারা ৩০টি মামলার তদন্ত করেছেন৷ এবার নতুন লোকবল পেলে সব মামলার প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত তদন্তের জন্য তালিকা করবেন৷ সানাউল হকের কথায়, প্রাথমিক তদন্তের শেষ করলে বোঝা যেত টাইব্যুনালের সংখ্যা আসলে কতটা বাড়ানো দরকার৷