বুধবার, জুন ২৫, ২০১৪

মধ্যরাত থেকেই অপেক্ষার পালা শুরু তাদের

মঙ্গলবার সকালে ছিয়ারা নামের এক যৌনকর্মী বিশ্বকাপ আয়োজক শহর ফোর্টালেজার অ্যারেনা কাসতেলাও স্টেডিয়ামের পাশে খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বললেন, আমি মধ্যরাত থেকে কাজ করি। প্রথম দিকে খুব বিষিয়ে উঠতো। কিন্তু এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ফোর্টালেজার অনেক যৌনকর্মীই রাতে সাড়ে ৪ ডলারের বিনিময়ে খদ্দেরদের আনন্দ বিলিয়ে থাকেন। কিন্তু ছিয়ারার দাম ২২ ডলার! তবে তার মতে মূল্যটা খুব বেশি নয়, বিশ্বকাপের টিকিট থেকেও সস্তা! বিশ্বকাপের প্রথম সপ্তাহের আয় নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। তার ভাষায়, আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আমি বিদেশীদের পছন্দ করি। কে জানে? আমি হয়তো তাদের কাউকে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি জমাবো। তবে বিশ্বকাপে যৌনপর্যটন নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তারা ২৪ ঘণ্টা প্রচারণা চালাতে প্রায় ৭০০ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ফোর্টালেজার ‘যৌনবাণিজ্য’ এখন ব্যাপক হয়ে উঠেছে। নাইটক্লাবের মালিকরা বেশ মুনাফা কামাচ্ছে।

তাদের অনেকেই বললেন, ফোর্টালেজার মতো শহরেও এই অবস্থা রীতিমতো নজিরবিহীন। অথচ অনেকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক যৌনপর্যটকদের প্রিয় শহর ফোর্টালেজা। তবে পুলিশের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রায় ৩০০০ পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে এই নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট যৌনকর্মীরা। ইয়ারা নামের বেলেমের এক যৌনকর্মী জানালেন, নিরাপত্তা বৃদ্ধির ব্যাপারটি ভাল। কারণ এতে আমরা কাজ করতে নিরাপদ বোধ করি। ইরাসিমা সৈকত দেড় ঘণ্টার পথ। এখানেই শহরের সবচেয়ে দামি প্রমোদবালাদের পাওয়া যায়। সোমবার একটি ক্রুজশিপে ৪০০০ মেক্সিকান আমোদ-প্রমোদে মত্ত ছিলেন। বারে লোকজনের ভিড়। স্থানীয় পর্যটন কর্মকর্তা জানালেন বিশ্বকাপের সময় প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার পর্যটক আসবে বলে আমরা আশা করছি। এমনই ক’জন পর্যটক র‌্যামন ওর্তেগা, পেশায় বিমান প্রকৌশলী। বললেন, ব্রাজিলিয়ান নারীদের আমি ভালবাসি।
আমি এখানে আসার পর থেকে শতবার তাদের প্রেমে পড়েছি। ওর্তেগো বহু বন্ধুদের সঙ্গে ছিলেন। এদের অনেকেই এতক্ষণ ধরে আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত ছিলেন। এক কোণায় দেখা গেল ভালেস্কা নামের এক শ্যাম বর্ণের দীর্ঘ চুলের এক নারীকে। তিনিও প্রমোদবালা, প্রতি খদ্দেরের কাছ থেকে ৯০ ডলার আদায় করেন! বললেন, বিদেশীদের আমি ভয় পাই। তবুও আমি কখনওই বাজে ব্যবহারের শিকার হইনি। আর আমি এক রাতে যা কামাই, কোন দোকানে কাজ করে কেউ হয়তো সারা মাসেও তা কামায় না। তাহলে আমি কেন এই পেশা ছেড়ে দেবো? ফোর্টালেজার প্রমোদবালারা উত্তর ইউরোপের পুরুষদের সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন।
এরপর আছে হল্যান্ড, সপ্যানিশ আর জার্মান পুরুষরা। ইতালিয়ানদের অবস্থান তার পরেই। শিশু ও কিশোরীদেরও যৌনকর্মী হিসেবে শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করা হচ্ছে। এনজিগুলোর একটি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক লিদিয়া রদ্রিগেজের মতে গত তিন বছরে সংখ্যালঘু যৌনকর্মীদের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গোটা শহরে প্রায় ১০০ জনের মতো শিশু-যৌনকর্মী ছিল। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০’তে। অ্যারেনা ক্যাস্তেলাও স্টেডিয়ামের নির্মাণ শ্রমিকদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্ভবত এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বকাপের ঠিক এক মাস আগে এই অভিযোগে ৮টি পরিচিত নাইটক্লাব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এরপর কর্তৃপক্ষ শিশু ও কিশোরীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিল। সরকারি শিশু ও নাগরিক পরিবার ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা তানিয়া গুর্গেল বলেন, অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে যা খুশি তা করতে দেন। আমরা পরামর্শ দেবো, তাদেরকে আমাদের কাছে দিন। আমাদের এখানে মনোবিদরা আছেন। একই সঙ্গে খেলাধুলা ও অন্যান্য কাজের সুযোগও আছে।