মঙ্গলবার, জুন ২৪, ২০১৪

তারেক জিয়া এসব কি করছেন?- গোলাম মাওলা রনি

তিনি যে এতোদুর পর্যন্ত নামবেন তা আমি ভাবতেও পারিনি। সম্ভবত দেশবাসীও ভাবতে পারেননি। কিন্তু তিনি নেমেছেন-আশ্চর্যজনক এবং অদ্ভুত সব কথা বলেছেন এবং সবাইকে হতবাক করে দিয়েছেন। তিনি জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে তুই/তুমি করে সম্বোধন করেছেন। সম্প্রতি তিনি মালয়েশিয়া সফরে এসে এত্তোসব কান্ড করে গেছেন। তার এই কর্ম সম্পর্কে যাদেও দায়িত্ব ছিলো-সেই তারা অর্থাৎ তার পক্ষ বা বিপক্ষের লোকজন অজানা এবং অজ্ঞাত কারনে টু শব্দটি করেননি। না আওয়ামীলীগের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ একাজের উপযুক্ত জবাব দেবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন- না বিএনপির নেতৃবৃন্দ তাদের নেতার এই কর্মকান্ড সমর্থন করে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছেন। তবে হা- বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবি সাংবাদিক শফিক রেহমান অবশ্য বিরাট এক নিবন্ধ লিখেছেন দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায়। আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সক্রিয়ভাবে কোন প্রতিক্রিয়া না জানানো হলেও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ঠিকই। তিনি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তারেক রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন কথাবার্তা বলেন। এসব কথাবার্তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো-জিয়াউর রহমানের হত্যা কান্ডের জন্য বেগম জিয়া এবং তারেক রহমানকে রিমান্ডে নেয়া দরকার বা উচিত। তারেক রহমান কথা বলবেন এবং সেই সব কথার উত্তর স্বয়ং বঙ্গবন্ধু কন্যা দেবেন-এমনটিই চেয়েছিলেন তিনি। বাস্তবে হয়েছেও তাই। আর এমনটি যে হবে তা আমার মতো স্বল্পবুদ্ধির লোক টের পেয়েছিলো বহু আগে। দৈনিক নয়া দিগন্তে গত ৬ই মে তারিখে চানক্যের কৌশল-বিএনপি সফল হবে তো! শিরোনামে লিখিত নিবন্ধে যেসব আশংকার কথা ব্যক্ত করেছিলাম-বলতে গেলে তার পুরোটাই ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। কেবল বাড়তি হয়েছে- জননেত্রীকে তুই/তুমি সম্বোধনটুকু। আমার ভয় হচ্ছে আগামী দিনে এদেশের রাজনৈতিক শিষ্টাচারের উপর আরো আঘাত আসবে এবং আরো নানা রকম সত্য, মিথ্যা ও বিভ্রান্তীমুলক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে মারাতœক ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হবে। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলার পূর্বে বলে নেই কেনো আওয়ামীলীগ নেতারা তাদের নেত্রীর বিষয় গুলো নিয়ে দায়িত্বপূর্ন আচরন করেন না। ঘটনার দিন তারেক রহমান সম্পাদিত একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব চলছিলো ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন এর হল রুমে। ঐ এলাকাদিয়ে সচিবালয়ে আসছিলেন ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতা। বইটির শিরোনাম সম্বলিত এবং তারেক রহমানের ছবি সহ শত শত ডিজিটাল ব্যানার এবং হাজার হাজার মানুষের ভীড় দেখে ভদ্রলোকের মন খারাপ হয়ে যায়। তার মনে প্রশ্ন জাগে- আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়! এরপরও যদি বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে অবৈধ রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী এবং জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বলার মতো লক্ষ লক্ষ মুখ অনবরত প্রচার করতে করতে জনমতকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ পায় তবে ভবিষ্যতে কি হবে? অন্যদিকে সরকার, দল এবং প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হলো এবং পরবর্তীতে বিপনন হবে এবং লোকজন পড়বে- অথচ কেউ কোন টু শব্দটি পর্যন্ত করলো না! ভদ্রলোক মন খারাপ করে সচিবালয়ে গেলেন না-চলে এলেন আমার অফিসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভদ্রলোক আমার নেতা ছিলেন। তাকে তখনো যেরুপ সম্মান করতাম এখনো করি তদ্রুপ বা তার চেয়েও বেশি। কারন দলের প্রতি তার যে নিষ্ঠা, সততা এবং ত্যাগ ছাত্র জীবনে দেখেছি পরবর্তীতে জীবনে তিনি সেটা জলাঞ্জলী দেননি কোন লোভ, লালসা বা অন্য কোন কারনে। তিনি মুখ ভার করে বললেন-কোথায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবক লীগ! কোন হানাহানি না করেওতো বইটির বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং করা যেতো। সব কাজ যদি প্রশাসন দিয়ে করতে হয় কিংবা সব কাজের জন্য যদি নেত্রীর নির্দেশ প্রয়োজন হয় তবে এতো লোকজন, পদ পদবী, সংগঠন থেকে কি লাভ ? তিনি বার বার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছিলেন এবং নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নেতৃত্বের সেই স্বর্নালী দিনগুলো-স্বরন করছিলেন। দল, নেতা-নেত্রীদের সম্মান রক্ষার্থে কতো কিছুইতো করেছেন। সব সময় নিজের বিবেক বুদ্ধির সাহায্য নিয়েছেন-কারো আদেশের জন্য অপেক্ষা করেননি। তিনি আফসুস করে বললেন- প্রশাসনের উপর ভরসা করে কি দল চালানো যায়! প্রশাসন দিয়ে কেবল প্রতিপক্ষকে হয়রানী করা যায়-মোকাবেলা করা যায়না। নেতা কর্মীরা অতিমাত্রায় প্রশাসন নির্ভর হবার কারনে দলের নিজস্ব অন্তর্র্নিহিত শক্তি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। আল্লাহ না করুক কোন বিপদ আসলে ওরা দৌড়াতেও পারবে না। কারন শরীরে চর্বি জমার কারনে একেক জনের পেট আর বুক এক হয়ে গিয়েছে। দুই রান এতো মোটা হয়েছে যে পা দুটো কমপক্ষে একহাত ফাঁক না করলে হাটতেই পারে না। কথাটি বলে তিনি উচ্চ স্বরে হেসে উঠলেন- আমিও তার সঙ্গে তাল মেলালাম। ভদ্রলোক চলে যাবার পর আমি ভাবতে বসলাম- আচ্ছা যদি সত্যিই এমন দিনটি আসে যখন দলবাজ সরকারী কর্মকর্তারা আর আমাদেরকে সমর্থন দেবে না। বাংলাদেশের পুলিশ র‌্যাব কথায় কথায় আদিষ্ট হয়ে গুলি চালাবে না, প্রশাসন সকলের প্রতি সমান আচরন করবে-তখন পরিস্থিতি কেমন হবে! আমরা কি তখনো এখনকার মতো প্রতিপক্ষকে সকালে বিকালে বাড়ী ছাড়া করতে পারবো! আমার আশংকা অবশ্যই পারবো না। বরং স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকলে আমাদের প্রতিপক্ষরা এখন যতটুকু করছে তার কিয়দাংশও আমরা করতে পারবো না। আমার এই ভাবনার দু’পয়সার মূল্যও নেই ক্ষমতাবানদের নিকট। তারা বরং এসব কথা শুনলে আমাকে মস্তিষ্ক বিকৃত এক অবোধ বালক হিসেবে আখ্যায়িত করে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেবে। কাজেই- ওসব দরকার নেই বাবা! আমি বরং তারেক জিয়াকে নিয়ে গবেষনা শুরু করি। দেখি আগামী দিন গুলোতে তিনি কি করতে পারেন এবং কি বলতে পারেন। আমার মনে হয় তারেক রহমান ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন তার দলের কার কতটুকু মুরোদ রয়েছে। তিনি এও জেনে গেছেন দলের কার কার সঙ্গে সরকারের বা আওয়ামীলীগের আঁতাত আছে। সব কিছু জানা সত্বেও তিনি টু শব্দটি করতে পারছেন না এই কারনে যে-দলটি যেকোন মুহুর্তে ভেঙ্গে যেতে পারে। আর আওয়ামীলীগ কায়মনো বাক্যে সেটাই চাচ্ছে- অনেকটা জাতীয় পার্টি টাইপের একটি গৃহপালিত বিএনপি। কাজেই এরকম একটি সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়া কিংবা দলের সাংগঠনিক পর্যায়ে পরিবর্তনের কোন সিদ্ধান্ত তিনি আপাতত নিবেন না। তিনি এমনটিও ভেবে রেখেছেন- হয়তো আগামী দিনে তার মা গ্রেফতার হয়ে গৃহবন্দী বা কারারুদ্ধ হতে পারেন। ক্ষমতাসীনরা কোকো কেন্দ্রীক একটি পৃথক বলয়ও সৃষ্টি করতে পারে। এত্তোসব ঝক্কি ঝামেলার মধ্যে তিনি হয়তো হাওয়ার ওপর মেওয়া ফলাতে চেষ্টা করতে পারেন। অনেকটা গোয়েবলসীয় কায়দায় তিনি নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিয়ে নিতে পারেন- ১। সংলাপের জন্য বিনয়ের সঙ্গে কাতর মিনতি জানিয়ে নিজেদেরকে অতিশয় দূর্বল এবং আওয়ামীলীগের করুনার পাত্র হিসেবে প্রমানের চেষ্টা করতে পারেন। এতে করে সরকারী দল আরো অহংকারী এবং অত্যাচারী হয়ে উঠবে। দলের ব্যাপারে উদাসিনতা দেখিয়ে রাজনীতি থেকে দুরে থাকার ভান করে কিছু গোপন কথাবার্তা নিজেদের লোকদের নিকট বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করবেন। এসব বিশ্বস্ত লোক আবার তাদেরকে বিশ্বাস করাবেন যারা নিয়মিত আওয়ামীলীগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। ফলে ক্ষমতাসীনরা ২০৪১ ইং সালের মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত করে সেই সব কপির প্র“ফ দেখার জন্য পাঠাবেন তাদের অনুগত খয়ের খা বিএনপি নেতাদের নিকট। এই অবস্থায় আওয়ামীলীগে দেখা দিবে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং জমিদারী মনোভাব। ফলে দলটিতে আত্মঘাতি হানাহানি, মারপিট, ভোগ দখলের প্রতিযোগীতা এবং দূর্নীতি বহুগুনে বেড়ে যাবে। ২। আগামী দিনে তারেক জিয়া সরাসরি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বক্তৃতা বিবৃতি দিবেন। ভাষাগুলো হবে খুবই জঘন্য প্রকৃতির। তিনি শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু ও জয় - এই তিনজনকে নিয়েই সমালোচনা শুরু করবেন। কিন্তু সবকিছুর কেন্দ্রেই রাখবেন আওয়ামীলীগ নেত্রীকে। যেমন- জয়কে কোন কথা সরাসরি না বলে বলতে পারেন- কেমন মা হয়েছো তুমি- সন্তানের কোন কাজের খোঁজ নাও না। তুমি জানো ও কি করছে- ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও তার ঔদ্ধত্য বাড়তে থাকবে দিনকে দিন। বলতে পারেন - যে পিতাকে নিয়ে গর্ব করো সেই পিতার আসল ঘটনা কতটুকু জানো? এসব কথার বিষবাষ্প অতি দ্রুত ডালপালা বিস্তার করে অনেক কিছুই গ্রাস করে নিবে, যদি আওয়ামীলীগ কুটনৈতিক দক্ষতায় জয়লাভ করতে না পারে তবে এসব প্রপাগান্ডা অদুর ভবিষ্যতে মারাত্মক সব সমস্যার সৃষ্টি করবে। বঙ্গবন্ধু পরিবারে বিভাজন সৃষ্টির জন্য তিনি হয়তো হঠাৎ করে শেখ রেহানা বা শেখ সেলিমের প্রশংসা করে ফেলতে পারেন। অন্যদিকে শেখ হেলাল, লিটন চৌধুরী, নিক্সন চৌধুরী তাপস সহ অনেককে হুটহাট টেলিফোন করেও বসতে পারেন। আর এসব টেলিফোনের খবরা খবর ফলাও করে প্রচারের ব্যবস্থা না করে তিনি কিছুতেই ছাড়বেন না। ৩। ফেয়ার ফ্যাক্সের মতো গোয়েন্দা সংস্থা যারা ব্যক্তিগত ভাড়াটিয়া গোয়েন্দা হিসেবে সারা দুনিয়ায় কাজ করে আধুনিক শার্লক হোমসের ন্যায়। এসব সংস্থার কোন একটির সঙ্গে ঘটা করে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেন আওয়ামীলীগের নেতাদের দেশী বিদেশী সম্পদ, বউ ছেলেমেয়ে বাড়ীঘর, কিংবা গোপন প্রনয়নীর সন্ধান লাভের জন্য। মিডিয়াতে ওগুলো ফলাও করে প্রচার হবার পর অনেকেরই কাপড় চোপড় নষ্ট হয়ে যাবে- মুখে তালা মেরে তারা সারাদিন ইয়া নফসি, ইয়া নফসি জপতে থাকবে। এই সুযোগে তিনি যদি কারো বিরুদ্ধে একটি প্রমান হাজির করেন এবং সঙ্গে দশটি গুজব যুক্ত করে-বাতাসে বোমা ফাটিয়ে দেন তাহলে চারিদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ কান্ড ঘটে যাবে। ভারতে বোফোর্স অস্ত্র কেলেংকারীতে রাজীব গান্ধীর মসনদ যেভাবে কেঁপে উঠেছিলো তেমনি মারিয়া মমতাজের ঘটনা দিয়েই কিন্তু এরশাদের পতন হয়েছিলো। জামাতের দূভার্গ্য তাড়া করেছিলো লন্ডনের একটি টেলিভিশন রিপোর্ট প্রকাশের পর। এসব বিষয় মাথায় রেখে তিনি আওয়ামীলীগের জাত শত্র“ আল জাজিরা, সি এন এন, সিবিএস, পাকিস্তানের জিও টিভি এবং ভারতের এনডি টিভির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করবেন। প্রথম কাজ হবে তার নিজের একটি সাক্ষাৎকার ঐসব টিভিতে প্রকাশ করা। তারপর অন্য কিছু। ৪। ইতিমধ্যেই তার নিকট সেসব তথ্য হয়তো চলে এসেছে যা দিয়ে আওয়ামীলীগের বিদ্যমান সন্দেহ ও অবিশ্বাসের আগুনে ঘি ঢালা যাবে। আওয়ামীলীগের কোন কোন নেতার সঙ্গে তার প্রয়াত পিতার কি কি কথা হয়েছিলো! কে কতো টাকা বা কি ধরনের সুযোগ নিয়েছিলো! কে কে মন্ত্রী পরিষদে যোগদানের জন্য দুই পায়ে দাড়ানো ছিলো? কে কে এক পায়ে খাড়া ছিলো? আওয়ামীলীগকে শেষ করার জন্য কোন কোন নেতা রাতের আধারে তৎকালীন সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলিত হতো এবং কি কি কথা বলতো- এসব যদি ধীরে ধীরে প্রকাশ করতে থাকেন তাহলে অনেকের জন্যই তা বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। ১/১১ র প্রেক্ষাপট থেকেও তিনি ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করবেন। একথা সবাই জানে যে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীরা যেমন তার বিরুদ্ধে ছিলো তেমনি মাসুদ বিরোধীরাও তার পক্ষে ছিলো। জেনারেল মইনের সঙ্গে তার সম্ভবত কয়েকদফা কথাবার্তা হয়েছে। সেইসব কথাবার্তার অডিও রেকর্ড বা অন্য কোন প্রমান হাতে রেখে তিনি একাধিক তথ্যের বোমা ফাটাতে পারেন। বলতে পারেন- আওয়ামীলীগের কোন কোন নেতা ১/১১ র সময় কি করেছেন, কি বলেছেন এবং এখন কি করছেন। দলীয় সভানেত্রীর বিরুদ্ধে তাদের নানা রকম আপত্তিকর কটুক্তি, অভিযোগ এবং তাকে প্রানে মেরে ফেলার জন্য একাধিকবার তৎকালীন কুশিলবদেরকে অনুরোধ করার সচিত্র চিত্র যদি জাতির সামনে প্রকাশ হয়ে যায় তবে তা সামাল দেয়া সত্যিকার অর্থেই কষ্টকর হবে। ৫। তিনি যে কোন মূল্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা চালাবেন। এক্ষেত্রে আরব বিশ্ব এবং চীনে তার দলের লবিং ব্যবহার করবেন। এমনকি টেলিফোন সংলাপ করতে পারলেও তিনি নিজেকে সফল ভাববেন। তিনি দুবাই, কাতার, সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে কর্মরত বাংলাদেশীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরব হবেন এবং প্রসারের জন্য তিনি অনলাইনের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন এবং চৌম্বক অংশটুকু প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে প্রচার করবেন। ৬। শেয়ার মার্কেট কেলেংকারী নিয়ে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা তদ্বির করবেন। এই মার্কেট থেকে লুট হওয়া অর্থ কিভাবে বাংলাদেশ থেকে সিংগাপুর, তারপর কেনিয়া হয়ে কিভাবে লন্ডন এলো সে গল্প সুন্দর করে তৈরী করবেন। শেয়ার মার্কেটের টাকায় লন্ডন, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, লাস ভেগাস, মিশিগান সহ কানাডার কোন কোন শহরে কয়টি বাড়ী হলো এবং এসব বাড়ীর মালিকদের ইতিকথা নিয়েও তিনি নাটক রচনা করতে পারেন। শেয়ার মার্কেট কেলেংকারীর নায়কের সঙ্গে এতো কিসের খাতির এসব কথা বলতে বলতে তিনি তার সীমা ছাড়িয়েও যেতে পারেন। তার পরিবার পরিজন নিয়ে অতীতে যেসব বাজে কথা বাজারে ছড়ানো হয়েছে সেসব কথার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনিও নিত্য নতুন সাসপেন্স তৈরীর চেষ্টা করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক সোনার মেডেল থেকে সোনা চুরির প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন মন্ত্রীকে জড়িয়ে ফেলবেন। তারপর তথ্য প্রমান সহকারে সোনার পেছনে আর কোন কোন সোনার ইন্ধন রয়েছে এবং সেই সোনার মূল্যবান ধাতু কিভাবে খাদযুক্ত হয়ে লন্ডনে গেলো তা নিয়ে রসালো রচনা প্রকাশ করবেন। ৭। হলমার্ক কেলেংকারীকে তিনি বাংলাদেশ থেকে নিউয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে নিয়ে যাবেন। সেখানে বাংলাদেশের একটি জাতীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদধারী অর্থনীতিবিদ কেনো এবং কোন কারনে হলমার্কের তানবীরের সঙ্গে একত্রে ঘোরাফেরা করেছেন সেই কাহিনী বলবেন। ঐ সময় কয়েকজন সাংবাদিক, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং নিউইর্য়কের জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত এক বাঙ্গালী কর্তা কেনো তানবীরের টাকায় ভর্তা খেতো তা নিয়ে চটুল চটুল কথাবার্তা ছাড়বেন। তার জীবন যেভাবে খাম্বার সঙ্গে একাকার করে দেয়া হয়েছে তেমনি কুইক রেন্টাল, পদ্মা সেতু, ঢাকা চট্রগ্রাম হাইওয়ে, ঢাকা-জয়দেবপুর, গাজীপুর হাইওয়ে, ব্যাসিক ব্যাংক কেলেংকারীর সঙ্গে একীভূত নায়ক নায়িকাদের রঙ্গ রসের নানা কাহিনী রচনা করতে তার চেষ্টা-তদ্বিরের কোন ঘাটতি থাকবেনা। জনাব তারেক জিয়া তার কর্মকান্ড দিয়ে একের পর এক ধুম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা চালাবেন। এতে করে তার দলের কতটুকু উপকার হবে তা আমি বলতে পারবোনা। তবে রাজনীতির ক্ষতি হবে অনেক। দেশীয় রাজনীতিতে ইদানিং কালের অশ্লীলতা হাল আমলের ঢাকাই ছবির শিরোনাম যথা-খাইছি তোরে, মাইরা ফ্যালামু, ইন্দুর যখন বান্দর ইত্যাদি, ডিপজল মার্কা ডায়ালগ (এতই অশ্লীল যে লিখতে পারলাম না) এবং ময়ুরী মার্কা দেহকেও অতিক্রম করেছে। সেই নোংরা রাজনীতি আগামী দিনে যে আরো নোংরা হচ্ছে- তার ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি জনাব তারেক জিয়ার সাম্প্রতিক মালয়েশিয়া সফরের মাধ্যমে। এতে করে তিনি বা তার দল কি আসলেই পার পাবেন! দেখা যাক-শেষ পর্যন্ত ঢাকাইয়া রাজনীতির অশ্লীল নৃত্য এবং কুরুচীপূর্ন সংলাপ কতটুকু নীচে নামতে পারে!