বুধবার, জুন ২৫, ২০১৪

রোনালদোর জন্য দুঃখই হচ্ছে

গত বিশ্বকাপে যে জায়গায় ছিল, সেখান থেকে কিছু কিছু দলকে লম্বা পদক্ষেপ ফেলে ফুটবলে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে দেখা খেলাটার জন্য সব সময়ই দারুণ এক ব্যাপার। এই বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র যেমন উন্নতির সিঁড়ি ভেঙে ক্রমেই ওপরের দিকে ওঠার আদর্শ এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে। আগের আসরগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ওরা যথেষ্ট পরিণত এক দল বলেই আমার বিশ্বাস। ওদের খেলায়ই এর প্রতিফলন আছে। পর্তুগাল ম্যাচেও তো ইয়ুর্গেন ক্লিনসমানের দল প্রায় জিতেই গিয়েছিল। টানা দ্বিতীয়বারের মতো শেষ ষোলো নিশ্চিত হতে আর মাত্র ২০ সেকেন্ডের মতোই বাকি ছিএখান থেকেই আমাকে এমন একজনের কাছে চলে যেতে হচ্ছে, যে সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হতে দেয়নি। বলছি ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর কথা। রিয়াল মাদ্রিদকে দশমবারের মতো ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব এনে দেওয়ার টাটকা স্মৃতি নিয়েই বিশ্বকাপে এসেছিল পর্তুগিজ অধিনায়ক। কিন্তু ওর ফিটনেস নিয়ে সংশয় ছিল। আর দিন দিন এটা পরিষ্কারও হয়ে গেছে যে রোনালদো নিজের সেরায় ছিল না। ওর জন্য দুঃখই হচ্ছে আমার। এটা স্পষ্ট যে ওর আসলে বিশ্রাম প্রয়োজন। কিন্তু দেশের আশা-আকাঙ্ক্ষা ওকে ঘিরেই আবর্তিত হওয়ায় সেও চায়নি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে দেশবাসীকে হতাশ করতে। কিন্তু ওর অবস্থা না ওকে সহায়তা করছে, না দলকে! প্রতিপক্ষও ওকে সেটা করতে দেয়নি, যা ও মাঠে করতে ভালোবাসে।
আর্জেন্টিনাও আরেকটি বড় দলের একটি, যারা নিজেদের খুঁজে পেতে লড়ছে। কেন তা বোঝা মুশকিল নয়। দলে দুর্দান্ত সব ফুটবলার আছে ঠিকই, কিন্তু ওরা সবাই একটা দল হিসেবে খেলতে পারছে না। আমার মতে, এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বাজে দল আর্জেন্টিনাই। এই বলায় অবশ্য আপাতত কিছুই এসে যায় না, কারণ ওরা ৬ পয়েন্ট নিয়ে নক-আউট পর্যায়ে গিয়ে বসে আছে। ওদের শুধু লিওনেল মেসির বাঁ পায়ের জাদুর ওপরই নির্ভর করে থাকলে হবে না। আশা করা যেতেই পারে যে টুর্নামেন্ট এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ওরা নিজেদের আরো গুছিয়ে নেবে। এবং ওদের আসল খেলাটা বেরোবে। কিন্তু কবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে যদি ওরা একটা দল হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে পারে, তাহলে আবার এই আর্জেন্টিনাই ভয়ংকর প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে।
আর যে দলগুলো বাদ পড়ে গেছে, তাদের মধ্যে বিশেষ করে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার জন্য দুঃখই হচ্ছে আমার। একেবারে বৈধ একটা গোল বাতিল হওয়ার মতো নিষ্ঠুরতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে ওদের। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছেই। কিন্তু এবারই না বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো গোললাইন প্রযুক্তি চালু হলো। এটা চালু হওয়ার পরও তাহলে কেন একটি দলকে এমন গোল বঞ্চনায় পুড়তে হলো? তার মানে, এই প্রযুক্তির একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমার কথা হলো, এই প্রযুক্তির ব্যাপ্তি আরো বাড়ানো হোক, যাতে এজাতীয় বিতর্কিত ঘটনার সংখ্যা কমে আসে। ব্যক্তিগতভাবে আমি খেলাটাকে যতটা সম্ভব খাঁটি রাখার পক্ষে। যদিও অফসাইডের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার একটু কঠিনই। সেটা ম্যাচে অফসাইডের সংখ্যাধিক্যের কারণেই।