বুধবার, জুন ২৫, ২০১৪

ফ্লাইট বিপর্যয়ে রিজেন্টে পদে পদে ভোগান্তি: ৩৭ ঘণ্টা পর মালয়েশিয়া ছাড়ল বিমান

ঢাকা-কুয়ালালামপুর বিমানপথে পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছে না দেশীয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট থাকলেও যাত্রী মিলছে মাত্র দুটির। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই নির্ধারিত শিডিউল বাতিল, বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এই বিমান সংস্থা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। এই রুটে সবচেয়ে কম ভাড়া দিয়েও যাত্রী পাচ্ছে না রিজেন্ট এয়ার। অব্যবস্থাপনায় ভুক্তভোগী যাত্রীরা রিজেন্টের বদলে বিদেশি বিমানকে বেছে নিচ্ছেন।
ফ্লাইট বিপর্যয়ে রিজেন্টে পদে পদে ভোগান্তি
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নির্ধারিত সময়ের ৩৭ ঘণ্টা পর গত শুক্রবার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে দেড়শ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে রিজেন্ট এয়ারের বোয়িং বিমানটি। কুয়ালালামপুর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টায় রিজেন্টের বিমান ছাড়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু সেই সময় বাতিল করে শুক্রবার রাত ১টায় নির্ধারণ করা হয়। সেই যাত্রাও কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাতিল করা হয়। এরই মধ্যে শুক্রবার রাত ১টায় আরেকটি ফ্লাইটের যাত্রীরা বিমানবন্দরে এলে তাঁরাও জানতে পারেন ফ্লাইট বাতিল। এই দুই ফ্লাইটের যাত্রীরা বিমানবন্দরে ভোগান্তিতে পড়ে।
এদিকে গত শুক্রবার রাতের ফ্লাইটেরও ছিল একই অবস্থা। শুক্রবারের ফ্লাইটটি কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাতিল করে রবিবার রাত ১টায় নির্ধারণ করা হয়।
বৃহস্পতিবার ফ্লাইটের যাত্রী রেজাউল করিম বলেন, 'রাত ১০টায় রিজেন্টের চেক ইন কাউন্টারে গিয়ে জানা যায় ফ্লাইট বাতিল। হোটেল কক্ষ ছেড়ে কুয়ালালামপুর থেকে এসে বিমানবন্দরে দুই সন্তান নিয়ে আটকা পড়েছি।'
একই ফ্লাইটের আরেক যাত্রী রেজওয়ান বলেন, 'পরবর্তী ফ্লাইটের সময় জানতে চাইলে তাঁরা কুয়ালালামপুর রিজেন্টের অফিসে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন।'
কাউন্টার থেকে কোনো সদুত্তর না পেয়ে যাত্রীদের প্রায় সবাই বিমানবন্দরে বসেই রাত কাটিয়ে দেন। এরই মধ্যে অনেকেই কুয়ালালামপুর অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁরা শুক্রবার রাত ১টায় বিমানের নতুন শিডিউল নিশ্চিত করেন।
বিমানবন্দরের সপ্তম তলায় এল-ব্লকের সামনে ফ্লোরে কাপড় বিছিয়ে বাচ্চাসহ রাত কাটিয়ে দেয় অনেকেই।
এক যাত্রী নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নির্ধারিত বাজেটের প্রায় সবই শেষ। অবস্থা এমন হয়েছে, পকেটে অবশিষ্ট কিছু রিঙ্গিত দিয়ে ড্রাইভারদের খাওয়ার ক্যাফেতে গিয়ে আড়াই রিঙ্গিতে খাবার কিনে আনি।'
ফ্লাইট বিপর্যয়ে রিজেন্টে পদে পদে ভোগান্তি
জানা যায়, কুয়ালালামপুর থেকে সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট রাত ১টায় (স্থানীয় সময়) ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে। বৃহস্পতিবার থেকে আটকেপড়া যাত্রীদের সঙ্গে যোগ হয় শুক্রবারের ফ্লাইটের যাত্রীরা। রাত ১০টায় বিমানবন্দরের প্রধান রিসিপশন থেকে জানানো হয়, রাত ১টার এই ফ্লাইটও বাতিল। এল-ব্লকের নির্ধারিত কাউন্টারে গিয়ে এই প্রতিবেদক রিজেন্টের কাউকেই খুঁজে পাননি। পরে ১০টা ৪৫ মিনিটে এক মালয়েশিয়ান মহিলা নিজেকে রিজেন্টের স্থানীয় কর্মী পরিচয় দিয়ে জানান, ঢাকা অফিস থেকে বলা হয়েছে ফ্লাইট বাতিল। কোনো কারণ জানি না। এরই মধ্যে দুই ফ্লাইটের শতাধিক যাত্রী জড়ো হয়ে কাউন্টারে বিক্ষোভ করে। পরে পৌনে ১১টায় জানানো হয় শুক্রবার দুপুর ১টায় ফ্লাইটটি সব যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে।
ক্ষুব্ধ যাত্রী সালাহ উদ্দিন ভঁূইয়া বলেন, 'আগে বোর্ডিং পাস দেন তারপর বিশ্বাস করব আগামীকাল দুপুরে বিমানটি ছাড়বে। এর আগে যাত্রীদের খাবার ও রাতে থাকার নিশ্চয়তা দিতে হবে।'
একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ শতাধিক যাত্রী প্রথমে রিসিপশনে গিয়ে অভিযোগ করেন। পরে বিমানবন্দর ম্যানেজারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিত অভিযোগ দিয়ে রিজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তবে ম্যানেজার তাঁর দাপ্তরিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগের পরামর্শ দেন। এরই মধ্যে বিমানবন্দর পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। পরে বিভিন্নমুখী চাপে এ-ব্লকে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের কর্মীদের দ্বারা চেক ইন করে দুপুর ১টায় শিডিউল নিশ্চিত করা হয়।
বিমানের অভ্যন্তরে গিয়ে দেখা যায়, অনেক সিটই খালি পড়ে আছে। ইকোনমি ক্লাসে ১৩২টি সিটের মধ্যে ৩২টি সিট খালি ছিল। যাত্রা শুরুর প্রথমে বিমানের এয়ারকন্ডিশন্ড বিকলের ঘটনা ঘটে। ২০ মিনিট পর সেটি চালু করে প্রধান রানওয়ে গিয়ে বিমানের পাখায় সমস্যা দেখা দেয়। সেখানে আধাঘণ্টা অপেক্ষার পর স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে এবং নিরাপদে অবতরণ করে। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মহাব্যবস্থাপক এস এম রিয়াজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মূলত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই ফ্লাইট ৩৭ ঘণ্টা বিলম্বিত হয়েছে। দুই বিমানের যাত্রীদের একসঙ্গে নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল।' তিনি যোগ করেন, আমাদের দুটি বোয়িংয়ের মধ্যে একটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকায় এই চাপটা সব রুটে পড়েছে।
- See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2014/06/25/100009#sthash.RCELYLvo.wuBj4YDZ.dpuf