বেঙ্গালুরুর আইটি হাবের মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠেছে সাইবার আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঠিকানা সার্ভিস ফর হেলদি ইউজ অব টেকনোলজি, সংক্ষেপে 'শাট'। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড সায়েন্সেসের (নিমহ্যান্স) অধীনে এই বিশেষ উদ্যোগে ইন্টারনেট জগতের মোহে পড়ে দৈনন্দিন জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া রোগীদের চিকিৎ্সা করা হয়।
ইন্টারনেট দুনিয়ায় দিনের কতটা সময় কাটিয়ে থাকেন আপনি? ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে কতক্ষণ ব্যস্ত থাকেন? ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘাঁটার বাতিক কি দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে? এই সমস্ত বা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর সদর্থক হলে বলাই চলে, আপনি একজন নেট নেশাড়ু। আমেরিকা-সহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই নবীন প্রজন্মের এই নতুন অসুখ নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন। বলা বাহুল্য, এর আঁওতা থেকে রেহাই পায়নি ভারতও। নিমহ্যান্স-এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, দেশের ৭৩ শতাংশ নবীনই এই রোগে আক্রান্ত।
মনোবিদদের বিশ্লেষণ, বয়ঃসন্ধি থেকে শুরু করে যৌবনের দিকে পা বাড়ানোর পথে মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনের ফলে মনের ওপর তীব্র চাপ তৈরি হয়। সেই চাপ সামলাতে অনেক সময়েই প্রযুক্তির শরণাপন্ন হয় তরুণ মস্তিষ্ক। আর তারই জেরে অজান্তে বেড়ে যায় ইন্টারনেটের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা। নিমহ্যান্সের চিকিৎ্সক মনোজকুমার শর্মা জানিয়েছেন, সাধারণত ১৩-১৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে ইন্টারনেট গেমস খেলার নেশা প্রবল ভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে। পাশাপাশি, ১৫-১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে দেখা গিয়েছে ফেসবুকের প্রতি অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ। নেশা এমনই তাদের পেয়ে বসে যে ধীরে ধীরে পড়াশোনা, খেলাধুলো বা অন্যান্য কাজ ও বিনোদন সম্পর্কে তীব্র অনাগ্রহ জন্মায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর প্রভাবে চোখ, মেরুদণ্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অসুখ শরীরে ঘাঁটি গাড়ে। এমনকি, নেশা মেটাতে প্রয়োজনে অপরাধ করতেও পিছ-পা হয় না সাইবার নেশাড়ুরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মদের নেশা ছাড়ানোর মতোই সাইবার আসক্তি দূর করার কাজও কঠিন। নেশা ছাড়ার সময় রোগীরা প্রায়ই মেজাজ হারিয়ে ফেলে। ঘুম কমে যায়। রক্তচাপ ওঠা-নামাও বিচিত্র নয়।
কিভাবে নেটের নেশা ছাড়ান মনোবিদরা?
নিমহ্যান্স সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে স্বল্প সময়ের জন্য নেট ব্যবহার করতে দেওয়া হয় রোগীকে। পাশাপাশি, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কেও রোগীদের সচেতন করা হয়। এ ছাড়া, অন্যান্য শখের প্রতি তাদের মনোযোগ ফেরানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। ডক্টর শর্মার মতে, নেট আসক্তি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন নয় সমাজ। তিনি চান, স্কুল ও অভিভাবকদের যৌথ উদ্যোগে নবীন প্রজন্মকে এই মনের অসুখ থেকে সারিয়ে তুলতে।