বাংলাদেশে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফরের মাধ্যমে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ক্ষমতাসীন এনডিএ সরকারের ইতিবাচক যাত্রা নির্দেশ করে। বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ভিসানীতি কিছুটা শিথিল করেছে দিল্লি আন্তঃসীমান্ত রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি হবে, গুয়াহাটি-শিলং-এর সঙ্গে ঢাকা পর্যন্ত নতুন বাস সেবা চালু হবে। এছাড়া ভারত কথা দিয়েছে, ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দেয়া হবে। দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এটা অনুপ্রেরণাদায়ক যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্রোধন্মোত্তভাবে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর পরও, নতুন সরকার ঢাকার সঙ্গে সমপর্ক রক্ষার ব্যাপারে পূর্ববর্তী মনমোহন সরকারের পদচ্ছাপই অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও মনমোহন সরকারও বাংলাদেশের জন্য নেয়া মৌলিক উদ্যোগগুলো সমপন্ন করতে পারেনি। দ্বিপক্ষীয় সমপর্ক অব্যাহত রাখার ইঙ্গিত দিয়ে সুষমা স্বরাজ কথা দিয়েছেন, বিষয়টি তার সরকার সেই উদ্যোগগুলো বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা করে যাবে। তবে বাংলাদেশকে হতাশ করে যে, তিনি এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা বেঁধে দেননি। পার্লামেন্টে নিজেদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায়, বিজেপি’র এখন কেবল নিজ দলের ভেতরই ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে যে, স্থলসীমান্ত চুক্তি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে মোদি সরকারের প্রয়োজন হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন গলানো। এর জন্য মমতাকে দেয়া সুষমার ফোনকলের চেয়েও বেশি কিছুর প্রয়োজন হবে। সুষমার ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার বার্তাটি হচ্ছে, নতুন সরকার পূর্ববর্তী সরকারের ঢাকা-দিল্লি সমপর্কে বিশাল গুরুত্ব দিয়েছে। এমনকি সুষমা স্বরাজ ইউপিএ সরকারের অবদান স্বীকার করেছেন এই বলে যে, গত কয়েক বছরে দুই দেশের মধ্যে অনেক বড় বড় চুক্তি সমপাদিত হয়েছে। নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, বাংলাদেশী পণ্যের জন্য ভারতীয় বাজার উন্মুক্ত করা, সীমান্ত পরিকাঠামো, জ্বালানি ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়গুলোতে অগ্রগতির কথাও বলেছেন তিনি। ঢাকার সহযোগিতা ভারতের প্রাচ্য নীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশও দেখবে ইউপিএ সরকারের সমপর্কের ধারাবাহিকতা একটি নতুন পর্যায়ে এসে পৌঁছে কিনা। ভারতের মূল সংযোগ হতে হবে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে। কিন্তু সুষমা স্বরাজ যেমনটি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণমূলক বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আমরা বাংলাদেশের সমাজের প্রতিটি অংশকে আস্থায় নিয়ে তা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বাংলাদেশ এখনও অভ্যন্তরীণ বিশাল অশান্তির পর্যায় থেকে উত্তরণ করতে পারেনি। তবে সুষমা স্বরাজ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করা থেকে নিবৃত্ত থেকেছেন। এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। বিরোধীদলীয় নেত্রী না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করাও একটি ভাল পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে ভারত যে এখনও বিএনপিকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল মনে করে, সেই ইঙ্গিতই দেয়া হলো।