রবিবার, জুলাই ২০, ২০১৪

যতক্ষণ স্বার্থ ততক্ষন প্রেম!

প্রেম! দুটি শব্দ দিয়ে ঘটিত একটি বাক্য। বাক্য অতি ক্ষুদ্র , কিন্তু তার অর্থ অনেক বিস্তৃত। পৃথিবীতে যত সৃষ্টি আছে, সবার মাঝেই প্রেম বিদ্যমান আছে। কারো মাঝে কম, কারো মাঝে বেশী। প্রেম আছে বলেই জগতটা আজ এতো প্রেমময়। প্রেমের জন্য মানুষের কতো সুন্দর সৃষ্টি (তাজমহল) উপমা স্বরূপ পড়ে রয়েছে আমাদের সামনে। প্রেম নেই এমন সৃষ্টি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যার মনে প্রেম নেই, বলতে হবে তার দেহে কোন আত্মা নেই। বাহ্যিক সে আত্মাবান হতে পারে, তবে সেটা হল প্রাণহীন আত্মা।

প্রেম যে কোন সৃষ্টির সাথে হতে পারে। মানবের সাথে হতে পারে আবার মানবীর সাথেও হতে পারে। মানব-মানবীর সাথে যে প্রেমের সৃষ্টি হয়; তা নিয়েই আমার আলোচনা। মানব-মানবীর মধ্যে যে প্রেমের খোঁজ পাওয়া যায়, সে প্রেম দু’ধরণের হতে পারেঃ জাগতিক প্রেম। আত্মিক প্রেম। আমাদের সমাজে যে প্রেমের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, বা সমাজে আজ যে প্রেমের রূপ দেখা যায় তাকে জাগতিক প্রেম বলে অভিহিত করা যেতে পারে। বেশীরভাগ সময় বিয়ের পূর্বেই এ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। জাগতিক কিছু ফায়দা অর্জন হলেও এ ধরণের প্রেম সর্বদা বিদ্যমান থাকে না। ফায়দা যখন অর্জন হয়ে যায়, তখন এ ধরণের প্রেমেরও সমাপ্তি ঘটে। জাগতিক প্রেমে একমাত্র অশান্তি ছাড়া অন্য কিছু আশা করা যায় না। জাগতিক প্রেম শুধু সময় ও জীবনকে নষ্ট করার জন্যই ঘটিত।
সমাজের মানুষও এ ধরণের প্রেমকে মূল্যায়ন করে না। স্বার্থ যতক্ষণ অটুট থাকবে, প্রেমও ততক্ষন স্থায়িত্ব লাভ করবে। স্বার্থ যখন পূর্ণ হবে, প্রেম ও তখন ফিনিস হবে। পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় জাগতিক প্রেম চিরস্থায়ী না। সাধারণত অপরিণত বয়েসের আবেগের বশেই বেশির ভাগ সময় এ ধরণের প্রেমের সূত্রপাত হয়। আবার কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পর অটোমেটিক এই আবেগ দূরীভূত হয়ে যায়। বিপত্তি ঘটে তখন। একজন হয়তো আবেগকে মূল্যায়ন করল না, কিন্তু অপরজন যে আবেগকে মূল্যায়ন করবে না তা তো বলা যায় না। যে আবেগকে পূর্ণরূপে আশ্রয় দিল সে তো তা মেনে নিতে পারে না। না পারার দরুন সে করে কী; নিজের মূল্যবান জীবনটা নষ্ট করে ফেলে। তাতে ক্ষতি কার হল! নিজের জিবনের স্বাদ তো অন্য কেহ বুঝবে না। নিজেকেই নিজের জিবনের স্বাদ উপভোগ করতে হবে। নিজের জিবনের মূল্য নিজেকে বুঝতে হবে। নিজে যদি নিজের জিবনের মূল্য না বুঝো তাহলে অন্যের বা কী করার থাকে! আত্মিক প্রেম সেটা তো আমাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ দান। যার মাঝে শুধু মধু আর মধু। বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে যার যাত্রা শুরু হয়। আত্মিক প্রেমে নেই কোন অবহেলা, নেই কোন অত্যাচার, নেই কোন পিছুটান, নেই প্রেমের প্রিয়জনকে হারানোর কোন দুশ্চিন্তা। আত্মিক প্রেমের পরিধি অনেক বিস্তৃত। জীবন ক্লান্ত হয়ে যাবে তারপরেও আত্মিক প্রেম ক্লান্ত হবে না। প্রেমের মানুষের কাছ থেকে তুমি যত দূরে থাকো না কেন, আত্মিক প্রেমের কারণে কখনো তার শূন্যতা অনুভব করবে না। আত্মিক প্রেমের দরুন সর্বদা প্রিয়জনকে নিজের পাশেই বিদ্যমান পাবে।
মনে হবে প্রিয়জন যেন তোমার পাশেই আছে। আত্মিক প্রেম যাদের অন্তরে বিদ্যমান তারা কখনো স্বার্থের চিন্তা করে না। কেননা তাদের মন-মগজ জুড়ে যে সর্বদাই প্রিয়জনের উপস্থিতি। প্রিয়জনকে বাদ দিয়ে কিভাবে সে নিজের কথা চিন্তা করবে; প্রিয়জনকে ছেড়ে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার সময় ও যে তার নেই। সে যেভাবে তার প্রিয়জনকে নিয়ে চিন্তিত, টিক তদরূপ তার প্রিয়জন ও তাকে নিয়ে চিন্তিত থাকবে। এটাই হল আত্মিক প্রেমের প্রধান রহস্য। এ ছাড়া আত্মিক প্রেমের দরুন অনেক সময় নিজেকে পাপ কাজ থেকেও সুরক্ষিত রাখা যায়। যেমন দরুন যখন কোন অপরূপ সুন্দর আকর্ষণীয় মানব আপনার সামনে উপস্থিত হবে, আর আপনি তার প্রতি মুগ্ধ হবেন, তার আকর্ষণে যখন আপনি তার চেহারার দিকে তাকাবেন তখন আপনি তার চেহারার মধ্যে নিজের প্রিয়জনের চেহারা দেখতে পাবেন; যখন তার দিকে এগুতে চাইবেন, তখন নিজের প্রিয়জনের কথা মাথায় চলে আসবে। নিজের প্রিয়জনকে নিয়ে ভাব্বেন আরে এর থেকে তো আমার প্রিয়জনই শতগুণে উত্তম। ভাবতে না চাইলেও আত্মিক প্রেমের দরুন আপনি যে ভাবতে বাধ্য হবেনই। প্রেম বেঁচে নেয়ার ভার আপনাদের হাতেই অর্পণ করলাম। নিজেদের জীবন নিয়ে নিজেরাই ভাবুন। আমি কেন অন্যের জিবনে হস্তক্ষেপ করতে যাবো!