নিলয় রাজধানীর স্বনামধন্য একটি স্কুলের ছাত্র। অষ্টম শ্রেণীর সমাপনীতে ভালো ফলাফল করার শর্ত হিসেবে প্রবাসী বড় ভাইয়ের কাছে বায়না ধরেছিল মুঠোফোন দেয়ার। ভাই নাজমুল হাসান প্রথমে আপত্তি জানালেও মা-বাবার কথামতো কিছু দিনের মধ্যেই একটি মাল্টি-মিডিয়া ফোন সেট পাঠায়। এতেই পাল্টে যায় নিলয়। একাকী থাকা তার ভারী পছন্দ। বিদ্যুত্ চলে যাওয়ার পরেও দমফাটা গরমে দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকে। সারাক্ষণ কেমন অস্থির, চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ।
এ পরিবর্তন পরিবারের সদস্যরাও আঁচ করতে পারেন। আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ার মতো স্কুলশিক্ষকরা জানান, পড়ালেখায় নিলয়ের আগের ধার নেই।
অমনোযোগিতার সঙ্গে যোগ হয়েছে স্কুল ফাঁকি দেয়া। এরপর মা-বাবা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ভয়ঙ্কর সব তথ্য। নিলয় সারাক্ষণ কক্ষ বন্ধ করে মুঠোফোনে পর্নো ছবি দেখে, ফেসবুকে চ্যাট করে সময় নষ্ট করে। এতেই ফলাফল খারাপ হতে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়। বাবা-মা ছেলের এই অধঃপতন বুঝতে পেরে মুঠোফোন সরিয়ে নিয়েও থামাতে পারেননি। ফোন ছেড়ে এখন সে পাড়ার সাইবার ক্যাফেতে বসে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে এসব পর্নোগ্রাফি ছবি দেখা।
নিলয়ের মতো চিত্র এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। এক অনুসন্ধানে জানা যায়, নিছক কৌতূহল থেকে গুলশানের একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের মুঠোফোনে নিজেদের পর্নোগ্রাফি ধারণ করে ব্লুটুথ দিয়ে সবার মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। পরে এটিই অন্যান্য সহপাঠীর কাছে পাঠায়। একটি মেয়ের পর্নো সিডি দোকানদারদের কাছে যাওয়ার পর বাজারজাত করা হয়। একপর্যায়ে মেয়েটির অভিভাবক মেয়েটিকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন। মাল্টিমিডিয়া ফোন সেটের সহজলভ্যতা আর নাগালে সাইবার ক্যাফে থাকায় স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়ছে মূল্যবোধ ধ্বংসকারী অনৈতিক এসব কর্মকাণ্ডে।
পরিবার থেকে আর্থিক সহায়তা বন্ধে চাপ দেয়া হলে বিগড়ে যাচ্ছে তারা। চুরি, ছিনতাই, খুনসহ জড়িয়ে পড়ছে নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। হাতের নাগালে মাল্টিমিডিয়া মুঠোফোন থাকায় তরুণরা অবাধে ঝুঁকছে পর্নোতে। শুধু তরুণ নয়, এর প্রভাবে এখন দিশেহারা শিশু-কিশোররাও। বাঙালির ঐতিহ্য পারিবারিক বন্ধনে চিড় ধরছে। ঠুনকো কারণে বাড়ছে হত্যাকাণ্ড। অপরাধ বিজ্ঞান ও আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কিনারা পাচ্ছে না—কীভাবে বন্ধ করা যাবে বৈচিত্র্যেভরা এই কৈশোর অপরাধ। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ইন্টারনেটভিত্তিক কিছু ওয়েবসাইটও রয়েছে, যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই পর্নোগ্রাফি প্রচার করে থাকে।
আর এ ফাঁদেই পা দিচ্ছে নিলয়ের মতো স্কুলছাত্ররা। ভবিষ্যত্ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে তাদের। অনুসন্ধানে এ তথ্যের সত্যতা মেলে রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ, নিরিবিলি স্থান ও পার্কে ঘুরে। সেখানে হরহামেশাই চোখে পড়ে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা জটলা পাকিয়ে মুঠোফোনে উপভোগ করছে এসব যৌন ভিডিও ক্লিপস। এ রিপোর্টের তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে একদিন বিকালে রমনা পার্কের ভেতরে ঢুকতেই দৃষ্টি আটকে গেল স্কুলের পোশাক পরা কয়েকজন শিক্ষার্থীর দিকে। বিষয় আর কিছুই নয়, সবার চোখ নিবদ্ধ একজনের মোবাইল স্ক্রিনের দিকে। প্রত্যেকেই মোবাইলে দেখছে পর্নো ভিডিও।
মুঠোফোন ছাড়াও রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সাইবার ক্যাফে। এসব ক্যাফেতে ঘণ্টাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হয়। এ সুবিধা নিয়ে স্কুলপড়ুয়া কোমলমতি শিশুরা গেমস খেলার কথা বলে পর্নোগ্রাফি ছবি দেখতে বসে যায়।
এলাকার কম্পিউটারের এক্সেসরিজের দোকান থেকে এখন মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে উত্তেজক গান, দৃশ্য, ভিডিও ক্লিপস লোড করে নেয়া যায় সহজে ও স্বল্প খরচে। ফলে দিনকে দিন স্কুল শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফির প্রতি চরমভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ৫৬ জন এবং নীলক্ষেত হাইস্কুলের ৭০ জন শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফিসহ স্কুলশিক্ষকদের হাতে ধরা পড়ে। শুধু রাজধানী নয়, বাইরের জেলা শহরের স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যেও মুঠোফোনে পর্নো দেখা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসন যেন দেখেও নির্বিকার।
এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইন্টারনেটে দক্ষিণ এশিয়ার নারী, কিশোরী ও শিশুদের নিয়ে অন্তত ৫০টি পর্নোসাইট রয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় বাংলাদেশের প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে। এছাড়া বর্তমান জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক রয়েছে সবার শীর্ষে। রাস্তাঘাটে চলতে গেলে প্রায়ই কানে ভেসে আসে, ‘এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলছে, জানিস আমার এফবিতে ৪০০ বন্ধু।’ ফেসবুকের বিভিন্ন অশ্লীল ছবি দেখে তারা পর্নোছবির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর বাইরে ঝোঁকের বসে বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে শিক্ষার্থীরা। দেশীয় সংস্কৃৃতি ভুলে ভিনদেশী অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে তারা।
এতে সার্বিকভাবে দেশীয় সংস্কৃতির ওপর কালো ছায়া নেমে আসছে। সরেজমিনে রাজধানীর অনেক স্থানে প্রকাশ্যে পর্নোসিডি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব জায়গায় অল্প দামে দেশি-বিদেশি পর্নোগ্রাফি সিডি আকারে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
মতিঝিল মডেল স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শহীদুল ইসলাম বলেন, পর্নোগ্রাফি এখন খুবই ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া দরকার।
তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে আরো সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ দেন।
অবাধ পর্নো বিক্রি কিংবা জড়িতদের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় নীতিমালার কথা শোনা গেছে। বিটিআরসিসহ অন্যান্য সংস্থা পর্নো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি পর্নোগ্রাফি রোধে ১০ বছর সাজা রেখে একটি আইনও হয়েছে, যদিও এর সুফল এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে শাহবাগ থানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এসব ঘটনায় সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ আসা দরকার। কিন্তু তা বেশ কষ্টসাধ্য, আমরাও জানি। আমরা আইনে বন্দি।
এর পরও এ ধরনের অভিযোগের তদন্তে ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলা রুজু করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবাধে পর্নো সিডি বিক্রির বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এসব খুঁজে বের করতে পুলিশের বিশেষ বাহিনী কাজ করে থাকে।
পর্নোসিডি বিক্রি হচ্ছে—এমন সংবাদ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালানো হয়। কয়েক মাস আগে একসঙ্গে ৩০ হাজার পর্নো সিডি আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও তথ্য কমিশনের সদস্য ড. সাদেকা হালিম বলেন, পর্নোগ্রাফির অবাধ ছড়াছড়ি যৌন ও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, পর্নোগ্রাফির বিস্তার ঠেকাতে পরিবারকে সব ভূমিকা পালন করতে হবে। মুঠোফোন কী কাজে ব্যবহার করছে, কী ধরনের ওয়েবসাইটে বসছে, তা মা-বাবাকেই নজরদারি করতে হবে। এই অপসংস্কৃতির হাত থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সমাজের সবাইকে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মা-বাবাকে সন্তানদের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। সন্তান কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে, কখন কোথায় যায়, কখন বাসায় ফেরে— এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তারা মনে করেন, প্রযুক্তি থেকে এখন আর কাউকে দূরে রাখার সুযোগ নেই। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে হিতে বিপরীত ফলই আসবে। এজন্য আদর, ভালোবাসা আর মমত্ব দিয়ে নিজেদের সন্তানকে বোঝাতে হবে এসবের কুফল সম্পর্কে। এসব ক্ষেত্রে মা-বাবা আর সন্তানের মধ্যকার জড়তা অসংকোচ দূর করা গেলেই সম্ভবপর হবে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কঠিন কাজ। নিজেদের এসব প্রচেষ্টার সঙ্গে অভিভাবকরা শিশু-কিশোর আর তরুণদের কাছে পর্নো সিডি বা ডিভিডির বাজার নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন দাবি করেছেন। সূত্র : বাসস
এ পরিবর্তন পরিবারের সদস্যরাও আঁচ করতে পারেন। আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ার মতো স্কুলশিক্ষকরা জানান, পড়ালেখায় নিলয়ের আগের ধার নেই।
অমনোযোগিতার সঙ্গে যোগ হয়েছে স্কুল ফাঁকি দেয়া। এরপর মা-বাবা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ভয়ঙ্কর সব তথ্য। নিলয় সারাক্ষণ কক্ষ বন্ধ করে মুঠোফোনে পর্নো ছবি দেখে, ফেসবুকে চ্যাট করে সময় নষ্ট করে। এতেই ফলাফল খারাপ হতে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়। বাবা-মা ছেলের এই অধঃপতন বুঝতে পেরে মুঠোফোন সরিয়ে নিয়েও থামাতে পারেননি। ফোন ছেড়ে এখন সে পাড়ার সাইবার ক্যাফেতে বসে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে এসব পর্নোগ্রাফি ছবি দেখা।
নিলয়ের মতো চিত্র এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। এক অনুসন্ধানে জানা যায়, নিছক কৌতূহল থেকে গুলশানের একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের মুঠোফোনে নিজেদের পর্নোগ্রাফি ধারণ করে ব্লুটুথ দিয়ে সবার মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। পরে এটিই অন্যান্য সহপাঠীর কাছে পাঠায়। একটি মেয়ের পর্নো সিডি দোকানদারদের কাছে যাওয়ার পর বাজারজাত করা হয়। একপর্যায়ে মেয়েটির অভিভাবক মেয়েটিকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন। মাল্টিমিডিয়া ফোন সেটের সহজলভ্যতা আর নাগালে সাইবার ক্যাফে থাকায় স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়ছে মূল্যবোধ ধ্বংসকারী অনৈতিক এসব কর্মকাণ্ডে।
পরিবার থেকে আর্থিক সহায়তা বন্ধে চাপ দেয়া হলে বিগড়ে যাচ্ছে তারা। চুরি, ছিনতাই, খুনসহ জড়িয়ে পড়ছে নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। হাতের নাগালে মাল্টিমিডিয়া মুঠোফোন থাকায় তরুণরা অবাধে ঝুঁকছে পর্নোতে। শুধু তরুণ নয়, এর প্রভাবে এখন দিশেহারা শিশু-কিশোররাও। বাঙালির ঐতিহ্য পারিবারিক বন্ধনে চিড় ধরছে। ঠুনকো কারণে বাড়ছে হত্যাকাণ্ড। অপরাধ বিজ্ঞান ও আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কিনারা পাচ্ছে না—কীভাবে বন্ধ করা যাবে বৈচিত্র্যেভরা এই কৈশোর অপরাধ। তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ইন্টারনেটভিত্তিক কিছু ওয়েবসাইটও রয়েছে, যারা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই পর্নোগ্রাফি প্রচার করে থাকে।
আর এ ফাঁদেই পা দিচ্ছে নিলয়ের মতো স্কুলছাত্ররা। ভবিষ্যত্ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে তাদের। অনুসন্ধানে এ তথ্যের সত্যতা মেলে রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি খেলার মাঠ, নিরিবিলি স্থান ও পার্কে ঘুরে। সেখানে হরহামেশাই চোখে পড়ে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা জটলা পাকিয়ে মুঠোফোনে উপভোগ করছে এসব যৌন ভিডিও ক্লিপস। এ রিপোর্টের তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে একদিন বিকালে রমনা পার্কের ভেতরে ঢুকতেই দৃষ্টি আটকে গেল স্কুলের পোশাক পরা কয়েকজন শিক্ষার্থীর দিকে। বিষয় আর কিছুই নয়, সবার চোখ নিবদ্ধ একজনের মোবাইল স্ক্রিনের দিকে। প্রত্যেকেই মোবাইলে দেখছে পর্নো ভিডিও।
মুঠোফোন ছাড়াও রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সাইবার ক্যাফে। এসব ক্যাফেতে ঘণ্টাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হয়। এ সুবিধা নিয়ে স্কুলপড়ুয়া কোমলমতি শিশুরা গেমস খেলার কথা বলে পর্নোগ্রাফি ছবি দেখতে বসে যায়।
এলাকার কম্পিউটারের এক্সেসরিজের দোকান থেকে এখন মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে উত্তেজক গান, দৃশ্য, ভিডিও ক্লিপস লোড করে নেয়া যায় সহজে ও স্বল্প খরচে। ফলে দিনকে দিন স্কুল শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফির প্রতি চরমভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ৫৬ জন এবং নীলক্ষেত হাইস্কুলের ৭০ জন শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফিসহ স্কুলশিক্ষকদের হাতে ধরা পড়ে। শুধু রাজধানী নয়, বাইরের জেলা শহরের স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যেও মুঠোফোনে পর্নো দেখা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রশাসন যেন দেখেও নির্বিকার।
এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইন্টারনেটে দক্ষিণ এশিয়ার নারী, কিশোরী ও শিশুদের নিয়ে অন্তত ৫০টি পর্নোসাইট রয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় বাংলাদেশের প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে। এছাড়া বর্তমান জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক রয়েছে সবার শীর্ষে। রাস্তাঘাটে চলতে গেলে প্রায়ই কানে ভেসে আসে, ‘এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলছে, জানিস আমার এফবিতে ৪০০ বন্ধু।’ ফেসবুকের বিভিন্ন অশ্লীল ছবি দেখে তারা পর্নোছবির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর বাইরে ঝোঁকের বসে বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে শিক্ষার্থীরা। দেশীয় সংস্কৃৃতি ভুলে ভিনদেশী অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে তারা।
এতে সার্বিকভাবে দেশীয় সংস্কৃতির ওপর কালো ছায়া নেমে আসছে। সরেজমিনে রাজধানীর অনেক স্থানে প্রকাশ্যে পর্নোসিডি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব জায়গায় অল্প দামে দেশি-বিদেশি পর্নোগ্রাফি সিডি আকারে বিক্রি করা হয়ে থাকে।
মতিঝিল মডেল স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শহীদুল ইসলাম বলেন, পর্নোগ্রাফি এখন খুবই ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া দরকার।
তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে আরো সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদ দেন।
অবাধ পর্নো বিক্রি কিংবা জড়িতদের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় নীতিমালার কথা শোনা গেছে। বিটিআরসিসহ অন্যান্য সংস্থা পর্নো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি পর্নোগ্রাফি রোধে ১০ বছর সাজা রেখে একটি আইনও হয়েছে, যদিও এর সুফল এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে শাহবাগ থানার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এসব ঘটনায় সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ আসা দরকার। কিন্তু তা বেশ কষ্টসাধ্য, আমরাও জানি। আমরা আইনে বন্দি।
এর পরও এ ধরনের অভিযোগের তদন্তে ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে মামলা রুজু করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবাধে পর্নো সিডি বিক্রির বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এসব খুঁজে বের করতে পুলিশের বিশেষ বাহিনী কাজ করে থাকে।
পর্নোসিডি বিক্রি হচ্ছে—এমন সংবাদ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালানো হয়। কয়েক মাস আগে একসঙ্গে ৩০ হাজার পর্নো সিডি আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও তথ্য কমিশনের সদস্য ড. সাদেকা হালিম বলেন, পর্নোগ্রাফির অবাধ ছড়াছড়ি যৌন ও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার না হওয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, পর্নোগ্রাফির বিস্তার ঠেকাতে পরিবারকে সব ভূমিকা পালন করতে হবে। মুঠোফোন কী কাজে ব্যবহার করছে, কী ধরনের ওয়েবসাইটে বসছে, তা মা-বাবাকেই নজরদারি করতে হবে। এই অপসংস্কৃতির হাত থেকে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সমাজের সবাইকে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মা-বাবাকে সন্তানদের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। সন্তান কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে, কখন কোথায় যায়, কখন বাসায় ফেরে— এসব দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তারা মনে করেন, প্রযুক্তি থেকে এখন আর কাউকে দূরে রাখার সুযোগ নেই। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে হিতে বিপরীত ফলই আসবে। এজন্য আদর, ভালোবাসা আর মমত্ব দিয়ে নিজেদের সন্তানকে বোঝাতে হবে এসবের কুফল সম্পর্কে। এসব ক্ষেত্রে মা-বাবা আর সন্তানের মধ্যকার জড়তা অসংকোচ দূর করা গেলেই সম্ভবপর হবে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কঠিন কাজ। নিজেদের এসব প্রচেষ্টার সঙ্গে অভিভাবকরা শিশু-কিশোর আর তরুণদের কাছে পর্নো সিডি বা ডিভিডির বাজার নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন দাবি করেছেন। সূত্র : বাসস