মঙ্গলবার, জুলাই ১৫, ২০১৪

প্রেমের ফাঁদে ফেলে পালাক্রমে ধর্ষণ

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই তরুণীকে বাসায় ডেকে এনেছিল বেয়াই আবদুর রহিম। রাতে কোমল পানীয়ের সঙ্গে কৌশলে নেশা জাতীয়দ্রব্য খাওয়ানো হয় তাকে। এতে অচেতন হয়ে পড়ে ওই তরুণী। তারপর ভণ্ড প্রেমিক আবদুর রহিম দুই বন্ধুকে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তাকে। ধর্ষণ শেষে তরুণীর সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার সব নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও ধর্ষকদের কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। অসহায় সেই তরুণী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। ওসিসি’র সমন্বয়ক বিলকিস আক্তার বলেন, মেয়েটি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নয়। ঘটনার ভয়াবহতায় সে বিহ্বলিত হয়ে আছে। তাকে কাউন্সেলিং করে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চলছে। গত শনিবার রাতে রাজধানীর কদমতলীতে ২৫ বছর বয়সী বিধবাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেছে প্রেমিক আবদুর রহিম ও তার দুই বন্ধু লিটন ও শহীদুল। এ ঘটনায় কদমতলী থানায় ধর্ষিতা যুবতী নিজেই বাদী হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা (মামলা নম্বর ২২) করেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ জানান, ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। পুলিশ ও ধর্ষিতার পারিবারিক সূত্র জানায়, গত শনিবার রাজধানীর কদমতলীর সিটিধারা জিয়া সরণি এলাকায় ৮ নম্বর সড়কের ২৩২ নম্বর ভাড়া বাসায় গণধর্ষণের শিকার হয় প্রেমিকের ডাকে ঘর বাধার স্বপ্ন নিয়ে চাঁদপুরের মতলব থেকে ঢাকায় আসা এক বিধবা যুবতী। ধর্ষণের শিকার যুবতী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। কদমতলী থানা ও ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত আবদুর রহিম ঢাকাতেই ব্যবসা করে। আত্মীয়তার সূত্র ধরে মোবাইল ফোনে ওই যুবতীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়েছিল। তরুণী প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে আবদুর রহিমের কথামতো পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত শনিবার পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। কদমতলী থানাধীন সিটিধারা জিয়া সরণি এলাকায় একটি টিনশেড বাসা ভাড়া নেয় রহিম। বাসায় ওই রাতে যুবতীকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে নেশা জাতীয়দ্রব্য খেতে দেয়। সরল বিশ্বাসে তা পান করে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। এরপর আবদুর রহিম ও অন্যরা তাকে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সকালে তরুণীকে ওই ঘরে ফেলে রেখে তার সঙ্গে থাকা টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। ধর্ষিতার চাচাতো বোন ফাতেমা বেগম জানান, ভুক্তভোগীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার  বেতাগীতে। যুবতী ঢাকায় আসার আগ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার মতলবে বড় বোন আসমার সঙ্গে থাকতেন। প্রতারক রহিম আসমার চাচাতো দেবর। সেই সূত্রে প্রথমে মুঠোফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। রহিম তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। এতেই ভুক্তভোগী যুবতী প্রভাবিত হয়। রহিমের কথামতো গত শুক্রবার বাড়ি থেকে ২১ হাজার টাকা, সোনার চেইন, কানের দুল, হাতের আংটি এবং বড় বোনের মোবাইল ফোন নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। ধর্ষণের পর লম্পটরা ভুক্তভোগীর সঙ্গে আনা টাকা এবং স্বর্ণের জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। আসমা আরও জানান, ভুক্তভোগী যুবতীর ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। এর কয়েকবছর পরে তাদের ঘরে একটি পুত্রসন্তান হয়। দুই বছর আগে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী মারা যায়। এরপর থেকে ভুক্তভোগী তার ছেলেকে নিয়ে চাঁদপুরের মতলবে বড় বোন আসমার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। এ সময় বড় বোন আসমার চাচাতো দেবর রহিমের সঙ্গে পরিবারের অজান্তে গোপনে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেবর আবদুর রহিমের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে হলেও সে পুরান ঢাকায় কাঁচামালের ব্যবসা করে। ঢামেকের ওসিসিতে থাকা ভুক্তভোগী নারী জানান, প্রায় এক বছর আগে পূর্ব-পরিচয়ের সূত্র ধরে রহিমের সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ের আশ্বাসে সরল বিশ্বাসে রহিমের সঙ্গে তিনি ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তার কথামতো শনিবার তিনি টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ওইদিন রাতের ঘটনার তার কিছুই মনে নেই। পরে সকালে ওঠে বুঝতে পেরে বাসায় কাউকে না পেয়ে আশপাশের লোকজনদের তিনি বিষয়টি জানান। কদমতলী থানার উপ-পরিদর্শক ও এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি বিয়ের প্রলোভনে আসামি আবদুর রহিম মেয়েটিকে ঢাকায় এনে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করেছে। আসামিদের ঠিকানা স্পষ্ট নয়। তাই তাদের গ্রেপ্তারে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।