শুক্রবার, জুলাই ১৮, ২০১৪

বিএনপির অসংখ্য ভুলের মধ্যে আমার দৃষ্টিতে ৫টি রাজনৈতিক ভুল-গোলাম মাওলা রনি

ইদানীং যে আমার কি হয়েছে তা বুঝতেই পারছি না। রাজ্যের সব অপ্রয়োজনীয় চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায় দিবানিশি-সব সময়। চিন্তা করতে করতে মাথার বুদ্ধি পেটেও চলে আসে। ফলে আমার ঢোলের মতো পেটটি ফুলে আরও বড় আকার ধারণ করে। ছোটকাল থেকে এমনিতে ঢোল আমার খুব পছন্দ। আরও পছন্দ ঢুলিদের।প্রায়ই আমার নিজেকে বড়জোর একটি নাদুস-নুদুস ঢোল বলে মনে হয়। আবার মন যখন খারাপ হয় তখন খালি কলসির সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে এক অনাবিল প্রশান্তি অনুভব করি। আধুনিককালে আমিই বোধহয় সেই অর্বাচীন নির্বোধ যে কিনা নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করে। আজ আমার এত কথা মনে করার কারণ হলো এ দেশের প্রধান বিরোধী দল অর্থাৎ বিএনপির ভুল নিয়ে লিখতে বসেছি। সঙ্গত কারণে আমার বিএনপি দলীয় বন্ধুরা টিটকারী মেরে বলতে পার, দেখ ঢোলের তামসা দেখ নিজ দলের ভুল ধরতে গিয়ে ফুটো হয়ে ফটাস মেরে এখন আমাদের নিয়ে গবেষণা করতে এসেছেন। আমার বন্ধুরা যতই সমালোচনা করুক না কেন, আমি আমার আরাধ্য কাজটি করেই যাব। কারণ আমি যে ঢোল। আমার ভেতরে যেমন জড়তা নেই তেমনি বাইরেও নেই। নেই কোনো লোভ লালসা, পদ পদবি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কিংবা মনোনয়ন প্রাপ্তির কোনো দুরাশা। আমি সব সময় সব কিছু বলে যাব কারণ আমি চোখের সামনে দেখছি দলটি ভুল করছে। তাদের একের পর এক ভুল যে কেবল তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সবাইকে, পুরো জাতিকে। তাদের দুর্বলতা মানে গণতন্ত্রের দুর্বলতা আর তাদের ধ্বংস মানে গণতন্ত্রের ধ্বংস। বিএনপির অসংখ্য ভুলের মধ্যে আমার দৃষ্টিতে ৫টি রাজনৈতিক ভুল নিয়ে আজ আলোচনা করব।
এক. বিএনপি এখন পর্যন্ত তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঠিক করতে পারেনি। তারা হয়তো আওয়ামী লীগকে প্রতিপক্ষ মনে করে। আবার কেউবা করে ঘৃণা। অনেকে চায় আওয়ামী লীগের পতন হোক। কিন্তু কিভাবে সেটা সম্ভব তা কিন্তু কেউ ভেবে দেখছে না। তারা যদি আওয়ামী লীগকে প্রতিপক্ষ মনে করত তবে আওয়ামী লীগের যা যা সম্পত্তি রয়েছে তারা তার চেয়ে বেশি অর্জন করতে চাইত যেমনি চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা. বি. চৌধুরীর সঙ্গে আমার প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অন্তরঙ্গ আলাপ হলো দিন কয়েক আগে র্যাডিসন হোটেলে। তিনি বললেন, জিয়াউর রহমানের দূরদৃষ্টি এবং অন্তর্দৃষ্টি সম্পর্কে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই পেলেন এমন একটি আওয়ামী লীগ যা কিনা তৎকালীন সময়ে আজকের জাতীয় পার্টি বা জামায়াতের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিল। তিনি কিন্তু তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেননি। বরং ধারণা করেছিলেন যেহেতু দলটির তৃণমূল সংগঠিত এবং সেখানে যথেষ্ট জনপ্রিয়তার ভিত্তি রয়েছে কাজেই একদিন না একদিন আওয়ামী লীগ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ জন্য তিনি বিএনপিকে ব্যাপকভাবে তৃণমূলে নিয়ে যেতে চাইলেন। তিনি এক বছরের মধ্যে সেই কাজ করতে চাইলেন যা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধু পঞ্চাশের দশকে ৭ বছর ধরে করেছেন। তিনি হিসাব করে বের করলেন যে ৭ বছরে আওয়ামী লীগ নেতারা কতটি জনসভা এবং কর্মিসভা করতে পারেন। তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন আগামী এক বছরে দৈনিক কয়টি জনসভা করতে হবে। এভাবে জিয়াউর রহমান ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং এমন দিনও গেছে যেদিন ৪-৫টি জনসভা করা হয়েছে। জলে স্থলে এবং অন্তরীক্ষে ভর করে তিনি দিবানিশি কাজ করেছেন। ফলে বিএনপি দাঁড়িয়ে গেল একটা ভিত্তির ওপর। বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে ৯টি ওয়ার্ড। প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে আওয়ামী লীগের একটি ৫৯ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী কমিটি। এর বাইরে প্রতি ওয়ার্ডে অন্তত দেড়-দুইশ লোক রয়েছে যারা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে দল করেন। দলের যে কোনো কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মী রয়েছে প্রায় দুই হাজার জন। এরাই মিছিল, মিটিং, মারামারি, কাটাকাটি করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এরাই দল বেঁধে উপজেলায় যায়, জেলায় যায় এবং দরকার হলে ঢাকায় আসে। বিএনপি যদি দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তবে তৃণমূলে তারও থাকতে হবে অনুরূপ বা তার চেয়েও শক্তিশালী কিছু। প্রতিষ্ঠার পর থেকে একমাত্র জিয়াউর রহমান সাহেবই তৃণমূলের যতটুকু সম্ভব ততটুকু ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। তারেক রহমান একবার শুধু সেই কাজটি পুনরায় শুরু করেছিলেন মাত্র। তারপর বিএনপি নেতৃবৃন্দ ঢাকায় বসে ফুসফাঁস ছাড়া তেমন কিছুই করেনি। বিএনপি যদি তাদের এই ভুলটির দিকে না তাকায় তবে আগামী দিনে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ।
দুই. বিএনপির প্রধান সিপাহসালার বা সেনাপতি কে। দলীয় সভানেত্রীকে আমার সম্রাজ্ঞী বলেই মনে হয়। কিন্তু তার পক্ষে মাঠে ময়দানে, রাত বিরাতে গোপনে এবং প্রকাশ্যে-কোন লোকটি দায়িত্ব নিয়ে সব কাজ করবেন_ এমন কাউকে আমি বিএনপিতে এখন দেখছি না। যারা আছেন তারা সবাই রুটিন ওয়ার্ক করছেন, হয়তো আদিষ্ট হয়ে, নয়তো চাপে পড়ে বা বাধ্য হয়ে। অন্যদিকে ১৯৮৬-৮৭ সাল থেকে আজ অবধি শেখ হাসিনাই আওয়ামী লীগের সম্রাজ্ঞী এবং একই সঙ্গে প্রধান সেনাপতি। তিনি তার দলের শুভানুধ্যায়ী সাহিত্যিক, সাংবাদিক, আমলা, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, ছাত্রনেতা, যুবনেতা, সহযোগী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কারণে-অকারণে সরাসরি যোগাযোগ করেন। কেউ তার জন্য করলে তিনি ফোন করে ধন্যবাদ দেন। আবার অন্যায় করলে ভর্ৎসনা করেন। সময় পেলে তিনি কখনো গোপনে আবার কখনো প্রকাশ্যে তার লোকজনকে নিয়ে পারিবারিক পরিবেশে খাওয়া-দাওয়াসহ বৈঠক করেন। এতে করে তার লোকজন নিজেদের মধ্যে শত বিরোধ এবং হানাহানি সত্ত্বেও দল ও নেত্রীর প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং সবাই এক সুরে কথা বলেন। এখন আমি যদি প্রশ্ন করি গত এক বছরে বিএনপিপন্থি সাংবাদিক, উকিল, শিক্ষক, ছাত্রনেতা, দলীয় নেতা, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, আমলা, কবি, সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবীরা কতবার ও কার কাছ থেকে একান্তে একটি ফোন পেয়েছেন কিংবা কোন নেতার দাওয়াতে এক টেবিলে বসে সেই নেতার বাড়িতে বসে দুমুঠো ডাল ভাত খেয়েছেন? আমার বিশ্বাস, বুকে হাত দিয়ে প্রকাশ্যে বিএনপির কেউ আমার কথার জবাব দিতে পারবেন না। আসলে জবাব দেওয়ার দরকারও নেই। কেবল নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন, আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা যদি এমনটি করেন তবে তারা কি খুব মন্দ কাজ করেছেন। যদি তা না হয় এবং আপনি যদি কাজটিকে ভালো মনে করেন তবে আজ অবধি ওপথে পা বাড়াননি কেন?
তিন. বিএনপি প্রথম থেকেই নবম সংসদকে ভালোভাবে নেয়নি। তারা মনে করে ১/১১'র কুশীলবদের সঙ্গে অাঁতাত করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। তারা এও মনে করে যে, তাদের উচিত হয়নি নবম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণের অনেকেই বিএনপির এ ধারণার সঙ্গে একমত হবেন। কিন্তু তারা এ কথাও বলবেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের যে দৃঢ় সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে তা মূলত নেওয়া উচিত ছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। কিন্তু যেহেতু নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং কলঙ্কজনক পরাজয় তারা ফেরাতে পারেনি সেহেতু তাদের উচিত ছিল বাড়াবাড়ি না করে পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফের মতো ধীরেসুস্থে এগুনো ১/১১'র কুশীলবরা তো প্রথমে আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে বিএনপির সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু বিএনপি সেই তুরুপের তাসটি খেলতে পারেনি দক্ষতার সঙ্গে যা তাদের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ খেলেছে সফলতার সঙ্গে। বিএনপি পারত নবম সংসদের ভেতরে এবং বাইরে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করে বর্তমান সময়ের মতো ধীরে চলো নীতিতে এগুতে। বিএনপি যদি তার অল্প কয়জন সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে সক্রিয় থাকত এবং কূটনীতিতে পারদর্শিতা দেখাতে পারত তবে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি এত লাইম লাইটে আনতে পারত না। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীতে যাওয়ার সাহস পেত না। অন্যদিকে বিএনপি যদি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে পঞ্চদশ সংশোধনী মেনে নিত এবং প্রথম থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত তবে আওয়ামী লীগের গো-হারা কেউ ঠেকাতে পারত না। সুদীর্ঘ ৬৫ বছরের ইতিহাসে গত ৬টি বছর নিয়তি আওয়ামী লীগকে সাহায্য করে আসছে। কিন্তু ইতিপূর্বের ইতিহাস হলো, আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষের জন্য যে গর্ত খুঁড়েছিল সেই গর্তে পড়ে তাদেরই আত্দাহুতি দিতে হয়েছে। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনেও একই পরিণতি হতো। আওয়ামী লীগ জিতেছে বিএনপির ভুলের জন্য।
বিএনপির বড় ব্যর্থতা সংসদে যথাসময়ে একজন বিরোধীদলীয় উপনেতা নিয়োগ দিতে না পারা। ফলে দীর্ঘদিনের মওদুদ-সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরোধে দলটি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিরতরে হারায়। অথচ যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে দুজনই টিকে যেতেন যা দলের জন্য হতো সর্বোত্তম। এর বাইরে আরও ভুল আছে। তারা সম্মেলন ডেকে একজন যোগ্য লোককে মহাসচিব বানাতে পারত। বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত তাকে কোনো অবস্থাতেই ডা. বি. চৌধুরী, কেএম ওবায়দুর রহমান, আবদুস সালাম তালুকদার, মান্নান ভুঁইয়া কিংবা খোন্দকার দেলোয়ারের সমপর্যায়ের নেতা বলা যাবে না। তিনি হয়তো মানুষ হিসেবে অতীতের সব মহাসচিবের তুলনায় ভালো। এতো ভালো মানুষ যদি কারও মামা, খালু কিংবা ভগি্নপতি হন তবে সংসারে শান্তি বিরাজ করবে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে ওসব চলে না।
চার. পররাষ্ট্র নীতিতেও ছিল ভ্রান্ত সব উদ্যোগ। তারা তাদের কর্মশক্তি আন্দাজ করতে পারেনি তেমনি পারেনি ভূ-তাত্তি্বক রাজনীতিতে জনগণের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা করতে। ভারত আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না যতদিন না তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা না করবে। ভারত যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ দেশে সৈন্য সমাবেশ করে তবে দেশটি ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। কাশ্মীর, পাঞ্জাব স্বাধীন হয়ে যাবে। বাংলাদেশ লাগোয়া ৭টি রাজ্যসহ তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ, সিয়াচেন, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ভারতের রাজনীতির একজন শিশুও এ নির্মম সত্য অনুধাবন করলেও বিএনপি করেনি। ফলে তারা একবার ভারত গেল সদল বলে তাদের মান ভাঙানোর জন্য। কিন্তু কিছুদিন পর তাদের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ থেকে অপমান করে দিল। আবার সেই দেশেরই নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য সীমাহীন সৌজন্যতা দেখাল। একটি বিষয় গভীরভাবে ভাবতে হবে, ভারত যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে গায়ে কাদা লাগিয়ে কিছু করত তবে ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকা শহরে ভারতের বিমান বাহিনীর আক্রমণ হতো। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও যদি পারতো তবে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিত।
পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে যদি আওয়ামী লীগের দিকে তাকান তবে দেখবেন তারা কাউকেই পাত্তা দিচ্ছে না। আপনি শুনে অবাক হবেন, জননেত্রী ভারতকে পাত্তা দিচ্ছেন সবচেয়ে কম। আপনারা যদি ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস বা দিলি্লর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊধর্্বতন কর্মকর্তাগণের সঙ্গে খুবই আন্তরিক হন তবে একান্তে তাদের জিজ্ঞাসা করুন, প্রকৃত ঘটনা কি। আপনারা সব কিছু শুনে অবাক না হয়ে পারবেন না। আওয়ামী লীগ কৌশলে সারা পৃথিবীকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, ভারতের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক হরিহর আত্দার। কোন বিকল্প না থাকায় সামাজিকতার কারণে তাদের অর্থাৎ ভারতকে সব কিছু মেনে নিতে হচ্ছে। আর এখানেই মারাত্দক হিসাবের ভুল করেছে বিএনপি। একইভাবে পশ্চিমা বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠতা এবং তাদের প্রতি নির্ভরতাও দলটিকে বিভ্রান্ত করেছে।
পাঁচ. সারা দেশের বিএনপি এবং ২০ দলীয় নেতাকর্মীরা ভেবে কূলকিনারা করতে পারছে না কেনইবা হঠাৎ করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়া হলো। সবাই বলছে আন্দোলন বন্ধের ঘোষণা হটকারী। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই আন্দোলন বন্ধ করে মূলত নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। যে শত শত মানুষ মারা গেল, কিংবা যে হাজার হাজার মানুষ নির্যাতিত হলো অথবা জেলে গেল তাদের নিকট দলীয় জবাবদিহিতা কি? কেউ কি আজ অবধি ক্ষতিগ্রস্ত ওই সব লোকজনের তালিকা করেছে? তাদের কি দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ কিংবা আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে? দলের কোন প্রথম শ্রেণীর দায়িত্বশীল নেতা কি ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে দেখতে গিয়েছিল? ফলে আগামীদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আপনি কিভাবে আশা করেন?
বিএনপির লোকজন মনে করে ৫ জানুয়ারির পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ২/১ দিনের ঘটনাবলির ওপর না সরকার আর না বিএনপির নিয়ন্ত্রণ ছিল। সারা দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বেশির ভাগ এলাকার প্রশাসন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতা করে টিকে ছিল। কেবলমাত্র রাজধানীর মতিঝিল, রমনা, তেজগাঁও প্রভৃতি থানা এলাকায় পুলিশের শক্ত নিয়ন্ত্রণ ছিল। আর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অতীতের মতো তেমন কিছু হয়নি। কাজেই কাদের পরামর্শে এবং কাদের আশ্বাসে বিএনপি হঠাৎ পিছুটান দিয়েছিল তা জানতে চায় তাদেরই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। আপনি যদি আমার মতামত জিজ্ঞাসা করেন তবে আমি বলব, বিএনপি কাউন্টার ইন্টিলিজেন্সের অর্থাৎ উল্টোমুখী গোয়েন্দাদের খপ্পরে পড়েছিল। আপনি যদি লক্ষ্য করেন তবে ইদানীংকালে বিএনপির বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যে এক ধরনের অসহায়ত্ব খুঁজে পাবেন। তারা যে কথা বলছে তা তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে না। ঈদের পর দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে এ বক্তব্য যিনি বা যারা দেন আপনি তাদের কণ্ঠ, মুখের অভিব্যক্তি এবং হাত, মাথা ও ঘাড় নাড়ানোর দৃশ্যগুলো লক্ষ্য করুন। দেখবেন ওগুলোতে কোনো ছন্দ নেই, নেই দৃঢ়তা বা আত্দবিশ্বাসের কোনো ছাপ। তাহলে ভবিষ্যৎ কি? বিএনপিকে সর্বপ্রথম ভুলগুলো স্বীকার করতে হবে। ভুল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অতীত ভুলের শিক্ষা থেকে নতুন করে কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। এরপর তৃণমূল সংগঠিত করে চুপটি মেরে অপেক্ষা করতে হবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের আপসহীন সেই তকমাটি ২০১৪ সালে কাজে লাগবে না। কারণ গত ৩৪ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। বুড়িগঙ্গার পানি বিষ হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগ সমুদ্র বিজয় করেছে, আরও কত কি যে ঘটল তা আমলে না নিয়ে অতীতের মনোভাব অাঁকড়ে ধরে রাখলে কাজ হবে না।
লেখক : রাজনীতিক।