শনিবার, জুলাই ০৫, ২০১৪

পরকীয়ার প্রমাণ থেকে যাচ্ছে প্রযুক্তির কাছে!

চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা_ যদি না পড় ধরা।' পরকীয়াপ্রেমীরা সাবধান! আপনাদের গোপন অভিসারের প্রতিটি কথা ধরা থাকছে প্রযুক্তির সিন্দুকে। অজান্তেই যার নাগাল পেয়ে যেতে পারেন আপনাদের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীরা। আর তার জেরেই আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় বাজিমাৎ করতে পারেন তাদের আইনজীবীরাও।
ল্যান্ডলাইনে কথা বলার দিন আজ প্রায় ইতিহাস। মোবাইল ফোনসেট আর ইন্টারনেটের মাধ্যমেই চলে যাবতীয় যোগাযোগ। কিন্তু সেই সূত্র ধরেই ইদানীং বিপাকে পড়ছেন অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া প্রেমিক-প্রেমিকারা। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে তাদের কথাবার্তার প্রতিটি মুহূর্ত ধরা থাকছে হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, গুগল-টক এবং মোবাইল ফোনসেটের মেসেজে। অকাট্য প্রমাণের সেই পথ তাড়া করেই বহু যত্নে লুকিয়ে রাখা পরকীয়ার হদিস পেয়ে যাচ্ছেন স্বামী বা স্ত্রী। চ্যাট হিস্ট্রি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলাপের বিবরণীই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় কার্যকরী প্রমাণ হিসেবে দেখা দিয়েছে এই যুগে।
ল্যান্ডলাইন ফোনের আমলে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় দ্বিচারিতার প্রমাণ জোগাড় করতে হিমশিম খেতেন আইনজীবীরা। সম্প্রতি সাক্ষ্য হিসেবে চ্যাট হিস্ট্রি ভারতের আদালতে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর তাতে অভিযোগ প্রমাণের উপকরণ জোগাড়ে ব্যাপক সুবিধা পাচ্ছেন সে দেশের আইনজীবীরা। কিছুদিন আগে এমনই প্রযুক্তিগত প্রমাণের সাহায্যে আদালতে স্বামীর পরকীয়া প্রেম প্রমাণ করতে পেরেছেন ব্যাঙ্গালুরুর এক গৃহবধূ। অন্য এক নারীর প্রেমে পাগল তার স্বামী খেয়ালই করেননি হোয়াটসঅ্যাপে প্রেমিকার সঙ্গে তার সব অন্তরঙ্গতার প্রমাণ থেকে গেছে। প্রেমে গদগদ সেই সব মেসেজ আদালতে পেশ করে মামলায় জিতে যান ওই গৃহবধূ।
ব্যাঙ্গালুরুর এক ফ্যামিলি কোর্টের আইনজীবী গীতা মেনন জানিয়েছেন, 'আজকাল বহু মক্কেলই হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য চ্যাট সাইটের বিস্তারিত মেসেজ তালিকা সঙ্গে নিয়ে আসেন। মোবাইল ফোন থেকে কোনো নাম্বারে ফোন করে তা পরে ডিলিট করে দিলেও পার পাওয়ার উপায় নেই। সার্ভিস প্রোভাইডারকে ফোন করে নির্দিষ্ট কল লিস্ট আদায় করা এখন সহজ।'
ভারতেরই একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশটিতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার ৪০ শতাংশের পেছনেই রয়েছে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক। অন্য দেশগুলোতেও অবস্থা প্রায় একই রকম। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় সহকর্মীর সঙ্গে গড়ে উঠছে ঘনিষ্ঠতা, আবার গৃহবধূরা অনেকেই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছেন পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের সঙ্গে। কখনো আবার নানা কাজে হামেশা মেলামেশা করতে হয় এমন কোনো পরিবারের বাইরের মানুষও তাদের মনে জায়গা করে নিচ্ছে।
আইনজীবী উজ্জ্বলা মান্ডগির মতে, আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর প্রজন্ম ফোনে বেশি কথা বলার চেয়ে মোবাইল টেক্সটিং বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো চ্যাট সাইটের মাধ্যমে মেসেজ চালাচালি করতেই পছন্দ করেন। সেইসব রেকর্ড হাতেনাতে পাওয়ার পর দ্বিচারিতা প্রমাণ করা খুবই সহজ।
যারা পরকীয়ায় জড়িয়েছেন, তাদের এসব ব্যাপারে সজাগ হওয়া খুবই দরকার। অন্যথায় অপেক্ষা করুন আরো কয়েকটা বছর, যখন 'নিষিদ্ধ' প্রেমের মেসেজ লুকানোর পাল্টা কোনো প্রযুক্তি খুঁজে পাবে টেক দুনিয়া।