শনিবার, জুলাই ০৫, ২০১৪

ক্লান্ত, নিস্তেজ, কাজকর্মে উৎসাহ নেই?

ক্লান্তির একটি বড় কারণ হলো অনিদ্রা। ঘুম খুব কম হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মনোযোগ ও স্বাস্থ্যের উপর

কোনো কিছুতেই আগ্রহ বা উৎসাহ নেই, কেমন যেন ক্লান্ত বোধ হয়। এমনটা কেন হয়?


ক্লান্তির একটি বড় কারণ হলো অনিদ্রা। ঘুম খুব কম হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মনোযোগ ও স্বাস্থ্যের উপর। পূর্ণবয়ষ্কদের প্রতিরাতে ঘুম হওয়া উচিত ৭-৮ ঘন্টা। ঘুম হওয়া উচিত বড় রকমের অগ্রাধিকার। ঘুমের একটি নিয়মিত সূচি থাকাও চাই। ঘুম ঘরে যেন না থাকে ল্যপটপ, সেলফোন ও টিভি। এরপরও সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ। ঘুমের বৈকল্য থাকতেও পারে।

ক্লান্তির কারণ

স্লিপ এপনিয়া (ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া) হতে পারে বড় কারণ। অনেকে মনে করেন বেশ ঘুম হচ্ছে, নাক ডাকিয়ে ঘুম। কিন্তু ঘুমে সাময়িক শ্বাসবোধ বা এপনিয়া তো পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সারারাত ধরে মাঝে মধ্যে এমন স্বপ্নকালের শ্বাসবিরতি। প্রতি বিরতিতে সামান্য ক্ষণের জন্য হলেও জেগে উঠা হয়ত অজান্তেই। ফলাফল হলো: আট ঘন্টা হলেও ঘুমের ঘাটতি থেকে গেলো। হা করে ঘুমানো খুব বাজে অভ্যাস। স্থূল হলে ওজন হ্রাস করা চাই। ধূমপান করে থাকলে বর্জন করুন। সিপিএপি ডিভাইস ব্যবহার করা যাতে রাতে নিদ্রাকালে শ্বাসপথ থাকে উম্মুক্ত।

খুব কম আহার করা

ক্লান্তির অন্যতম কারণ শরীরে পর্যাপ্ত জ্বালানির জোগান নেই। খুব কম আহার করলে ক্লান্তি আসে। আবার ভুল খাবার খেলেও সমস্যা হয়। সুষম খাদ্য খেলে রক্তের সুগার মানকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখে, আর রক্তের সুগার নেমে গেলে যে শ্লথ গতি হয় শরীর একেও রোধ করে। সকালের খাওয়া কখনও বাদ দেবেন না, প্রতিবেলার আহারে যেন অবশ্য থাকে জটিল শর্করা ও প্রোটিন। যেমন গমের টোস্ট ও ডিম। দিনভর স্থির এনার্জির জন্য কম করে সারাদিন খাওয়া।

ক্লান্তির কারণ রক্তস্বল্পতা

নারীদের ক্লান্তির একটি কারণ হলো রক্তস্বল্পতা। ঋতুস্রাবের সময় অধিক রক্তক্ষয় হলো লৌহ ঘাটতি। মেয়েরা তাই থাকে ঝুঁকিতে। প্রয়োজন লোহিত কনিকা। কারণ এর অক্সিজেন বহন করে টিস্যুও দেহযন্ত্রে। লৌহ ঘাটতি হয়ে রক্তস্বল্পতা হলে লৌহ পরিপূরক ওষুধ, লৌহসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, কৃশমাংস, যকৃত, শেলফিস, ধানস, লৌহসমৃদ্ধ শস্য। কচু শাক, লালশাখ, তেল দিয়ে ভেজে খেলে ভালো।

ক্লান্ত ও বিষন্নতা যদি দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।

ক্লান্তির কারণ হতে পারে হাইপোথাইরয়েডিজম

গলদেশের মূলে রয়েছ ছোট গ্রন্থি থাইরয়েড। আমাদের দেহবিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের জ্বালানিকে গতিতে ও এনার্জিতে রূপান্তরিত করে। এর গতিকেও নিয়ন্ত্রণ করে। গ্রন্থির কাজ কর্ম শ্লথ হলে, বিপাক চলে মন্দগতিতে। শরীরও তখন স্লথ হয়ে যায়। রক্ষ পরীক্ষায় যদি প্রমাণ হয় যে থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ-কর্ম মন্থরগতি তাহলে প্রয়োজন হতে পারে সিনথেটিক হরমোন তখন চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।

ক্যাফিন ওভারলোডে হতে পারে ক্লান্তি

ক্যাফিন মাঝারি মাত্রায় সজাগ সতর্ক করে মান। কিন্তু খুব বেশি হলে বাড়ে হূদঘাত হার। রক্তচাপ ও বাড়ায়। শরীর ও মনকে ক্লান্ত করে।

মূত্র সংক্রমণেও হতে পারে ক্লান্তি মূত্রসংক্রমণ যাদের হয় তাদের প্রস্রাবে হয় জ্বালা ও বারবার প্রস্রাব করার তাগিদ। তবে সংক্রমণ সব সময় জোরালো উপসর্গ নিয়ে আসেনা। একমাত্র লক্ষণ হতে পারে ক্লান্তি। মূত্র পরীক্ষা করলে মূত্র সংক্রমণ ধরা পড়ে। এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসায় ক্লান্তিও ভালো হয়।

ডায়াবেটিসও হতে পারে ক্লান্তির কারণ

ডায়াবেটিস হলে রক্তে বাড়ে সুগার। দেহকোষে না ঢুকে সেই সুগার ক্রমাগত বাড়তে থাকে রক্তে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় হরমোন ইনসুলিনের সহায়তায় সুগার দেহকোষে ঢুকে শক্তিতে রূপান্তরিত হবার কথা। কিন্তু ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিনের হয় ঘাটতি। ফলাফল; এত খাওয়ার পরও শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল ও নি:শক্তি। তাই ক্লান্তি যদি অটল হয়ে থাকে তাহলে ডায়াবেটিসের জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। ডায়াবেটিসের চিকিৎসার মধ্যে জীবন যাপনে পরিবর্তন আনা; খাদ্যবিধি ও ব্যায়াম করা। প্রয়োজনে মুখে খাবার ওষুধ ও ইনসুলিন।

পানিশূন্যতাও হতে পারে ক্লান্তির কারণ

ক্লান্তির একটি বড় কারণ পানিশূন্যতা। ব্যায়াম করুন বা ডেক্সে কাজ করুন, শরীরে পানি চাই, শরীর শীতল থাকা চাই। পিপাসা পেলে বোঝা গেলো পানির প্রয়োজন শরীরের। সারাদিন পানি পান করুন, তাহলে লঘু মূত্র হবে, হালকা লাগবে। শরীর চর্চার আধঘন্টা/এক ঘন্টা আগে পানি পান করুন দুগ্লাস।

হৃদরোগেও হতে পারে ক্লান্তি

প্রতিদিনের কাজ কর্মে ক্লান্তি ভর করলে যেমন বাগান পরিষ্কার করা বা ঘর পরিষ্কার করা তখন বুঝতে হবে হয়ত হৃদযন্ত্র আর এত সবল নয়। যদি দেখা যায় যে কাজগুলো এক সময় সহজ মনে হতো সেগুলো এখন কঠিন মনে হচ্ছে, তাহলে হৃদচিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো। যদি হৃদরোগ হয়ও তাহলে জীবন ধারার পরিবর্তন, ওষুধ, চিকিৎসা কুশলে রাখতে চেষ্টা করবে। শক্তি ফিরিয়ে আনতে হবে শরীরে।

সিফট্ কাজে ঘুমের সমস্যা

রাতভর কাজ বা নাইট শিফট্ দেহঘড়িকে গোলমাল করে দিতে পারে। ক্লান্তি ভর করবে, যখন জাগার কথা জেগে উঠলে ক্লান্ত মনে হবে। দিনে ঘুমাতেও সমস্যা হতে পারে। বিশ্রামের সময় দিনের আলোর মুখোমুখি যত কম হওয়া যায়। ঘর রাখতে হবে যতদূর সম্ভব অন্ধকার, শীতল ও শান্ত। তাতেও না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ।

ফুড এলার্জিতে ক্লান্তি

অনেকের মতে, লুকিয়ে থাকা ফুড এলার্জি ঘুম কাতর করতে পারে। আহারের পর ক্লান্তি তীব্র হলে তা ফুড এলার্জির জন্য হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম বা ফাইব্রোমায়ালজিয়া, মাম, অটল ক্লান্তির কারণ হতে পারে স্বাস্থ্য সমস্যা। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী। মৃদু ক্লান্তি হলে, ব্যায়াম আধ ঘন্টা। সপ্তাহে তিনবার।

ভিটামিন ডি'র অভাবে

'দিনে যতটুকু ভিটামিন ডি প্রয়োজন, তা পূরণ করতে একজন প্রাপ্তবয়স্ককে বেশ কয়েক লিটার দুধ পান করতে হয়'। মন্তব্য ডা. স্পিটস-এর।

পরীক্ষার উপায়

ভিটামিন ডি এর অভাব রয়েছে কিনা, তা জানার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. ইয়র্গ স্পিটস এর ৪টি প্রশ্ন রয়েছে। চারটি প্রশ্নের মধ্যে কমপক্ষে ২টির উত্তর যদি কারো হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে তাঁর শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রয়েছে।

মাত্র ৪টি প্রশ্ন

প্রথম প্রশ্ন: আপনি কি প্রায়ই ক্লান্ত বোধ করেন? কোনো কিছুতেই আগ্রহ বা উৎসাহ নেই? দ্বিতীয় প্রশ্ন: প্রায়ই কি আপনার মেজাজ খিঁচড়ে থাকে? তৃতীয় প্রশ্ন: সহজেই সর্দি-কাশি বা সংক্রমণে আক্রান্ত হন? চতুর্থ প্রশ্ন: দিনের বেশিরভাগ সময় কি বন্ধ ঘরে থাকেন?

ঘাটতি পূরণের উপায় কী?

প্রফেসর ডা. ইয়র্গ স্পিটস বলেন, শীতপ্রধান দেশে মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকে। তাই রোদ থেকে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন পূরণ করা সেভাবে সম্ভব নয়৷ গরমের দেশের মানুষেরও যে ভিটামিন ডি এর ঘটতি হয়না তা নয়৷ এক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-ট্যাবলেট সেবন করা প্রয়োজন, তবে তা দীর্ঘদিন নয়।

সূর্যের তাপের অভাবতিনি বলেন, যদিও সূর্যের তাপের সাহায্যে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, কিন্তু যারা অনেক বেশি বন্ধ ঘরে থাকেন, তাদের জন্য পুরোপুরি ভিটামিন ডি গ্রহণ করা কখনো সম্ভব হয় না।

শিশুদের প্রয়োজন ভিটামিন ডি

গরমের দেশে আগে দেখা শীতকালে যেতো, ছোট শিশুদের গায়ে তেল মেখে রোদে শুইয়ে রাখা হতো ভিটামিন ডি গ্রহণের জন্য৷ আর শীতপ্রধান দেশে জন্মের পর বাচ্চাদের দুধের সাথে গুলে খাওয়ানো হয় ভিটামিন ডি-ট্যাবলেট৷ তাই ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন সবার।

ফ্যাকাশে এবং দুর্বল

ফ্যাকাশে এবং দুর্বল চেহারা দেখেই কিন্তু বোঝা যায়, যে তাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রয়েছে। পুরোপুরি ফিট অনুভব করতে এবং নানা সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ডি এর কথা সবারই মনে রাখা উচিত। খাদ্য তালিকায় ডিম, দুধ, মাছের মতো ভিটামিন ডি-যুক্ত সবকিছুই থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। আর পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী সূর্যের তাপ গ্রহণ।