আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির গভীর প্রেমে টানাপড়েন চলছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সমপ্রতি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত এরশাদের লেখা একটি কলামের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দলটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট স্বৈরাচার এরশাদ সুবিশাল অভিমানমূলক অভিযোগনামা জাতির সামনে পেশ করেছেন। গোটা অভিযোগনামাটি পড়লে মনে হয়, ভুল বোঝাবুঝির ক্ষুব্ধ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এরশাদের। এছাড়া মনে হয়, শাসক দল আওয়ামী লীগ ও তাদের মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টির মধ্যে গভীর প্রেমের টানাপড়েন চলছে। গতকাল রাজধানী নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মিথ্যা, অসত্য তথ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃতি করেছেন এরশাদ।। নির্লজ্জ ভণ্ডের যে কোন রুচি, বিবেক, ব্যক্তিত্ব, নৈতিকতা এবং ন্যূনতম কমিটমেন্ট থাকে না সেটি এই লেখায় এরশাদ নিজেকে সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, কপট লুসিফারের আসল বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে এরশাদের এই লেখার মধ্যে। আর এই লেখার মধ্যে লুসিফারের আত্মার সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে এবং যাদের এখনও এরশাদকে চিনতে দ্বিধা আছে তাদের কাছে তিনি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। ‘ক্ষমতা আমি দখল করিনি, ক্ষমতা আমাকে দেয়া হয়েছিল’ এরশাদের এমন মন্তব্যের সমালোচনার করে রিজভী আহমেদ বলেন, বাটপারি আর কাকে বলে। ক্ষমতা টেকওভারের জন্য অনেকদিন ধরেই কখনও গোপনে এবং শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পরে অনেকটা প্রকাশ্যেই তিনি ষড়যন্ত্র করেছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অনেক রাজনীতিবিদ, গবেষক, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা অসংখ্য তথ্যনির্ভর গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা বলেন, মিথ্যাচারের প্রতিভূ হচ্ছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। লুসিফারের মতো মিষ্টি কথায় তিনি ভোলাতে চেয়েছেন অনেককে। বৃদ্ধ বিচারপতি সাত্তারের নিকট আনুগত্যের ভণ্ডামি করে তাকে বারবার বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এরশাদ এমন একজন মোনাফেক যে, পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়ে শপথ করেও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী এরশাদ বহু রক্তপাতকে পেছন থেকে উস্কেছেন। সুচতুর এরশাদ সময়ের সদ্ব্যবহার করতে কখনওই ভুল করেননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা ও পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসতে গিয়ে ধরা পড়া বাঙালি অফিসারদের বিচারের জন্য বিচারিক ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে ভূমিকার কারণেই তিনি সেনাবাহিনীতে কখনওই সমাদৃত ছিলেন না। তাই দাবার ঘুঁটি চেলে সেনাবাহিনীতে পাকিস্তান প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধা বিরোধকে উস্কানি দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড ঘটাতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই যে স্থির মস্তিষ্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন সেটি জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং অনেক আলামত গবেষকরা তুলে ধরেছেন। জিয়া হত্যায় যে এরশাদ জড়িত সেটা জেনারেল মঞ্জুর প্রকাশ করে দিতে পারেন সেজন্যই এরশাদ তার ডেপুটেড লোকদের আদেশ দেয় ‘উইদাউট এনি ডিলে মঞ্জুরকে মেরে ফেলো’। রিজভী আহমেদ বলেন, খলের কখনও ছলের অভাব হয় না। মিথ্যাবাদীরা সত্যের শাণিত শব্দকে ভয় পায়। সুতরাং এরশাদ এর জীবনই কেটেছে হত্যা, ষড়যন্ত্র, লোভ, দুর্নীতি আর রক্তপাতের মধ্যে। এরশাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে রিজভী আহমেদ বলেন, দীর্ঘ নয় বছর ক্ষমতায় থেকে আপনার ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারানো মোজাম্মেল, দীপালি সাহা, বাবলু, জেহাদ, নুর হোসেন, শাজাহান সিরাজের আত্মদানে এদের বুক থেকে রক্ত ঝরেছে না পানি ঝরেছে? ছাত্রদের মিছিলে ট্রাক চালিয়ে নিষ্পাপ কিশোরদের দেহ থেঁতলিয়ে দিয়েছে কে? রাজনীতিবিদ ছাত্রনেতা ও শ্রমিক নেতাদের টাকা দিয়ে কিনে রাজনীতিকে কলুষিত করেছে কে? দালালের কখনও রঙ বদলায় না। একাত্তরে যিনি দালালি করেছেন দেশের বিরুদ্ধে ও হানাদারদের পক্ষে, এখনও তিনি দালালিতেই লিপ্ত আছেন।