রমজান মাসে অ্যাসিডিটি, পেটের সমস্যা, শারিরীক দুর্বলতাসহ নানা রকম সমস্যা লেগেই থাকে। ভাজাপোড়া এবং অধিক মসলাজাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য এসব সমস্যা হয় বেশি। রমজান মাসে আপনি যদি খাদ্য তালিকায় ডাবের পানি রাখেন তাহলে এসব সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি আপনি থাকবেন সুস্থ ও সুন্দর। ডাব নিয়মিত খেলে কিডনি রোগ হয় না। আবার কিডনি রোগ হলে ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ কিডনি অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের হয় না। ফলে ডাবের পানির পটাশিয়াম ও দেহের পটাশিয়াম একত্রে কিডনি ও হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে। এ অবস্থায় রোগীর মুত্যু অনিবার্য। তাই যাদের দেহে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না তাদের ডাবের পানি পান করা উচিত না। ডাবের পানি রোগীকে পান করানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দেহে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব হলে এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে ডাক্তার ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন। ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দেহে প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়।
ডাবের পানি এই ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে।
ডাবের পানি এই ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে।
নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কিডনি সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ হয়। ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রনও রয়েছে। রক্ত তৈরির জন্য আয়রন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত তৈরি হলে প্রতিটি অঙ্গ হবে বেশি শক্তিশালী, ফলে কর্মশক্তিও বাড়বে। দেহে আয়রনের পরিমাণ ঠিক থাকলে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতিও উচ্চমাত্রায় রয়েছে। এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত।
গরমে ছোট-বড় সবারই দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে ত্বকে লালচে কালো ভাব ফুটে ওঠে। ডাবের পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। তারুণ্য ধরে রাখতে এর অবদান অপরিহার্য। ডাবের পানি যেকোনো কোমল পানীয় থেকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ। কারণ, এটি সৌন্দর্য চর্চার প্রাকৃতিক মাধ্যম। ডাবের পানি মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী।
মুখে জলবসন্তের দাগসহ বিভিন্ন ছোট ছোট দাগের জন্য সকাল বেলা ডাবের পানি দিলে দাগ মুছে এবং মুখের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ে। গ্লুকোজ স্যালাইন হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়। ডাবের পানিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পুষ্টি না থাকলেও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম, আমিষ ২.৩ গ্রাম, শর্করা ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ১-০.১১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৩ কিলোক্যালরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডাবের পানি খেলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি থেকে মুক্ত থাকা যায়। কার্ডিওভাসকুলারের সকল সমস্যা দূর করে। ডাবের পানিতে অল্প পরিমাণে চর্বি থাকে। দ্রুত শরীরের মেদ কমাতে চাইলে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ডাবের পানি থাকা দরকার।
ডাবের পানি ক্ষুধা দূর করে। রিবোফ্লাবিন, নায়াসিন, থায়ামিন, পিরিডক্সিন, ফোলেটস এর মতো শক্তিশালী ভিটামিন রয়েছে ডাবের পানিতে। ডাবের পানির অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, স্নায়ুতন্ত্র শক্তিশালী করে একইসঙ্গে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।
ডাবের পানি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগের ভাইরাল ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খেলে গর্ভের শিশু সুস্থ থাকে। ডাবের পানি মূত্রবর্ধক। সামান্য পরিমাণ শর্করা থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
যাদের হাত কিংবা পায়ের নখ ভঙ্গুর, তারা ডাবের পানি দিয়ে নখ ধুয়ে ফেললে নখ শক্ত হবে। ডাবের পানিতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস রয়েছে যা দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে, রক্ত পড়া বন্ধ করে এবং দাঁতের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।