এরশাদের মুখের ওপর বলে দেন, ইফতারে কূটনৈতিকদের অনুপস্থিতির জন্য দায় পার্টির মহাসচিবের। অফিস থেকে সাধারণত আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। আর ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেন পার্টির মহাসচিব। অতীতে এভাবেই হয়েছে।
এ সময় এরশাদ আরও কথা বলতে গেলে তার একান্ত সহকারীও তাকে পাল্টা কথা শুনিয়ে দেন। আপনার কর্মকাণ্ডের কারণে কেউ আর আপনাকে সমর্থন করছেন না। বিদেশিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সেটা আপনি বোঝেন না।
খালেদ আরও বলেন, আপনি একক সিদ্ধান্তে জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুকে পার্টির নতুন মহাসচিব করেছেন। তাকে কেউ পছন্দ করেন না। যে কারণে পার্টির সিনিয়র নেতারা আর দলীয় কর্মসূচিতে আসছেন না। পার্টির মহাসচিবকে আপনি কোনো কথা বলার সাহস রাখেন না। আপনার সামনে তিনি যদি কোনো প্রেসিডিয়াম সদস্যকে অপমান করেন, তাহলেও আপনি পার্টির মহাসচিবের পক্ষেই নেবেন।
আপনার সঙ্গে কোনো সিনিয়র নেতা নেই। কে আছেন আপনার সঙ্গে? আছে কিছু সুযোগসন্ধানী নেতা। আমিও আপনার সঙ্গে থাকতে চাই না।
এ সময় এরশাদ তাকে বলেন, যাও তুমি চলে যাও। তোমার দরকার নেই। তোমাকে ৩ মাসের ছুটি দিলাম।
গত ১২ জুলাই রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে অনুষ্ঠিত হয় রাজনীতিবিদ ও কূটনৈতিকদের সম্মানে এরশাদের ইফতার পার্টি। আর পরদিন ১৩ জুলাই ভোরে বিমানযোগে রংপুর যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ভোরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এরশাদের সঙ্গে তার একান্ত সহকারীর এই বিতর্কের ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্যরা হতবাক বনে যান। সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই ঘটনার পর থেকে এরশাদের বাসা ও অফিসে যাওয়া-আসা ছেড়ে দিয়েছেন মেজর (অব.) খালেদ আক্তার। তার সেলফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া দেননি তিনি।
বিগত নির্বাচনের আগে থেকেই রওশন এরশাদের সঙ্গে এরশাদের বিরোধ চলে আসছে। এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেয় জাপা। মাত্র দু’টি কর্মসূচিতে একত্রে দেখা গেছে তাদেরকে। পার্টির এমপিরাও রওশনমুখী, এরশাদের বাসা কিংবা অফিসমুখী হচ্ছেন না। এরশাদ এমপিদের ফিরে আসার বারবার আহ্বান জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
বিগত নির্বাচনের সময় সিনিয়র নেতাদের মধ্যে এরশাদের পক্ষে একাট্টা ছিলেন তার আপন ভাই জিএম কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খাঁন। তারাও এরশাদের নানা রকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না।
সরকার ও বিরোধী দলে থাকা নিয়ে সমালোচনা করায় আপন ভাই জিএম কাদেরকে শো’কজ করেন এরশাদ। শুরু হয় টানাপড়েন। জিএম কাদেরও কড়া ভাষায় তার জবাব দেন। সিনিয়র একজন নেতার মধ্যস্থতায় দুইভাইয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়।
সরকার ও বিরোধী দলে থাকা নিয়ে সমালোচনা করায় আপন ভাই জিএম কাদেরকে শো’কজ করেন এরশাদ। শুরু হয় টানাপড়েন। জিএম কাদেরও কড়া ভাষায় তার জবাব দেন। সিনিয়র একজন নেতার মধ্যস্থতায় দুইভাইয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়।
তারপর জাতীয় মৎস্যজীবী পার্টির এক অনুষ্ঠানে জিএম কাদের ও জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলুর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ঘটনার সুত্রপাত হয় বক্তৃতা দেওয়া নিয়ে। জিএম কাদের তার বক্তৃতায় একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা নিয়ে নিজ দল জাতীয় পার্টির ভূমিকার সমালোচনা করেন। এ সময় মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু রাগ করে মঞ্চ থকে উঠে যান।
নানা কারণে জিএম কাদেরও ইদানিং জাতীয় পার্টির কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। দলের অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে একাধিক ইফতার পার্টির আয়োজন করা হলেও তাতে দেখা যায়নি জিএম কাদেরকে। এমনকি রাজনীতিবিদ ও কূটনৈতিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতারেও অনুপস্থিত ছিলেন জিএম কাদের।
অন্যদিকে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে অনুপস্থিত থাকলেও ভেতরের খবর ভিন্ন পাওয়া গেছে। এরশাদের অনেক সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না তিনি, এ কারণেই না-কি নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন বলে সিনিয়র নেতারা দাবি করেছেন।
মধ্যম সারির অবস্থা আরো নাজুক। অনেক যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকর্মীকে ঘুরে ফিরে দেখা যাচ্ছে দলীয় কর্মসূচিতে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বড় দলের মধ্যে মান-অভিমান থাকতেই পারে। আমি বিশ্বাস করি, এরশাদ সময় হলেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। এর বেশি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।