শনিবার, জুলাই ১৯, ২০১৪

মৃত্যুবার্ষিকীতে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ

তার চলে যাওয়া কাঁদিয়েই চলেছে নিরন্তর। দেশের সাহিত্য, নাটক, সংগীত আর চলচ্চিত্রাঙ্গনে গত দু’বছর ধরে বহমান এ কান্না যাকে ঘিরে তিনি বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদ। শুধু সাহিত্যই নয়, দেশের নাটক, চলচ্চিত্র এবং সংগীতাঙ্গনও যার অসাধারণ সৃষ্টির আলোতে দারুণভাবে আলোকিত। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে আমরা হারিয়েছি তাকে। মৃত্যুর আলিঙ্গনে আপনজনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে তিনি এখন না ফেরার দেশের বাসিন্দা। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও সর্বাধিক পঠিত, নন্দিত লেখক এবং সংগীতস্রষ্টা, নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন কীর্তিধন্য এ মানুষটি। বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক জনপ্রিয় এই লেখকের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। হুমায়ূন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই লেখালেখি শুরু করে সাহিত্য সমালোচকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। ‘নন্দিত নরকে’ তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। এরপর ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘রজনী’, ‘এপিটাফ’, ‘পাখি আমার একলা পাখি’, ‘ফেরা’, ‘নিষাদ’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নির্বাসন’, ‘অমানুষ’, ‘রূপালী দ্বীপ’, ‘শুভ্র’, ‘দূরে কোথাও’, ‘সংসপ্তক’, ‘বাদশাহ নামদার’, ‘সাজঘর’, ‘বাসর’, ‘নৃপতি’র মতো পাঠক হৃদয় জয় করা উপন্যাস আসে তার লেখনীতে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘জোৎস্না ও জননীর গল্প’, ‘১৯৭১’, ‘সূর্যের দিন’র মতো উপন্যাস। হুমায়ূন সৃষ্ট ‘মিসির আলী’ ও ‘হিমু’ হয়ে উঠে পাঠকদের প্রিয় চরিত্র। ‘অনন্ত নক্ষত্র বীথি’, ‘ইরিনা’র মতো কয়েকটি কল্পবিজ্ঞান কাহিনীও লিখেছেন তিনি। উপন্যাসের পর নাটক লেখায় হাত দেন হুমায়ূন আহমেদ। এ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠায় অধ্যাপনা ছেড়ে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের এই শিক্ষক। আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিক নাটক দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান তিনি। এরপর ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নক্ষত্রের রাত’র মতো জনপ্রিয় নাটকও আসে তার হাত দিয়ে। নাটক লেখার একপর্যায়ে নির্দেশনায়ও নামেন হুমায়ূন আহমেদ। নাটক নির্দেশনায় হাত পাকিয়ে নাম লেখান চলচ্চিত্র পরিচালনায়। ‘আগুনের পরশমনি’ দিয়ে শুরু করে ‘শ্রাবণমেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ ও সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ কয়েকটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদ তৈরি করেছিলেন শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যময় এক আবেদন। তার লেখা বই মানেই সর্বাধিক পাঠকগ্রহণযোগ্যতা প্রাপ্তি। তেমনই তার নাটক মানেই ছিল ছেলে বুড়ো সব শ্রেণীর দর্শকের টিভি সেটের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়া। চলচ্চিত্র নির্মাণেও হুমায়ূন আহমেদ দর্শক সন্তুষ্টিতে জাদুকরি ছোঁয়া দিয়ে গেছেন সব সময়। ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুরে জন্ম হয়েছিল এ কীর্তিমানের। তার ডাকনাম কাজল। বাবা পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। মা আয়েশা ফয়েজ। হুমায়ূন আহমেদ প্রথম বিয়ে করেন ১৯৭৩ সালে গুলতেকিনকে। তাদের চার সন্তান নুহাশ, নোভা, শীলা ও বিপাশা। ২০০৫ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বিয়ে করেন শাওনকে। এই দম্পতির দুই সন্তান নিষাদ ও নিনিত।



চ্যানেল আইতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান
হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আজ চ্যানেল আই দিনব্যাপী প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠামালা। এ ধারাবাহিকতায় সকাল ৭-৩০ মিনিটে চ্যানেল আই’র ‘গানে গানে সকাল শুরু’ প্রচারের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশেষ আয়োজনটি। এ অনুুষ্ঠানে থাকবে হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও তার পছন্দের গান। রাত ১টা  ও সকাল ৯-৪৫ মিনিটে প্রচার হবে ‘গ্রামীণফোন তৃতীয় মাত্রা’। এই বিশেষ পর্বে হুমায়ূন আহমেদের নানাদিক নিয়ে কথা বলেবেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। বিশেষ এ তৃতীয় মাত্রাটি উপস্থাপনা করেছেন ফরিদুর রেজা সাগর। পরিচালনায় জিল্লুর রহমান। সকাল ১০-৩০ মিনিটে প্রচার হবে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ‘লীলাবতী’। পরিচালনায় মেহের আফরোজ শাওন। অভিনয়ে জয়া আহসান, মাহফুজ আহমেদ, চ্যালেঞ্জার, ডা. এজাজ, মাজনুন মিজান, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। বেলা ১-০৫ মিনিটে প্রচার হবে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। রাত ১১-৩০ মিনিটে রয়েছে রাজু আলীমের পরিচালনায় বিশেষ অনুষ্ঠান ‘দরজার ওপাশে হুমায়ূন’।