দীর্ঘ সাত বছর ধরে বিচ্ছিন্ন পরিবারটি। মমতাময়ী মায়ের সঙ্গে দেখা নেই ছেলের। দাদির আদর থেকে বঞ্চিত নাতনিরা। রাজনীতির রোষের শিকার হয়ে বিভিন্ন মহাদেশে আছেন তারা। তবে এবার সেই আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে জিয়া পরিবারের। চলতি সপ্তাহে সৌদি আরবে পুনর্মিলন হচ্ছে তাদের। আজ রাতে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে ঢাকা ত্যাগ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একই সময় লন্ডন থেকে সপরিবারে সৌদি আরব যাবেন খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া মালয়েশিয়া থেকে কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর সপরিবার সৌদি আরব যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দীর্ঘ সাত বছর পর জিয়া পরিবারের আবেগঘন পুনর্মিলন হতে যাচ্ছে। ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক সিডরে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো বিদেশ পাড়ি জমান। ২০০৭ সালের ৭ই মার্চ সেনানিবাসের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার হন তারেক। এরপর রিমান্ডে নিয়ে তার ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। ভেঙে দেয়া হয় মেরুদ-ের হাড়। গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। একই বছরের ৩রা সেপ্টেম্বর ভোরে সেনানিবাসের মঈনুল রোডের বাসভবন থেকে খালেদা জিয়া ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২০০৮ সালের ১৭ই জুলাই জামিনে মুক্তি পান কোকো। পরদিন স্ত্রী শর্মিলী রহমান ও দুই কন্যা জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমানকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান। এদিকে ৫ মাস ২৫ দিন কারাভোগের পর একই বছরের ৩রা সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তারেক রহমান। এরপর ১১ই সেপ্টেম্বর স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডন যান। সেই থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন আসছেন তিনি। ২০১২ সালে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুরে গেলে সেখানে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় কোকোর। এদিকে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় চলে আসেন কোকো। এরপর থেকে সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। ২০১২ সালে লন্ডন সফরে যান খালেদা জিয়া। ওই সময় তারেক রহমানেরও সাক্ষাৎ হয় তার। ২০১০ সালের ১৩ই নভেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজরিত ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল রোডের বাড়ি থেকেও উচ্ছেদ করা হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর দীর্ঘ ৪ বছর ধরে তিনি একাকী বসবাস করছেন গুলশান-১ এর ৭৯ রোডের এক নম্বরের বাড়িটিতে। দোতলা এই ছোট্ট বাড়িটিতেই কাটছে নিঃসঙ্গ দিন-রাত। ওয়ান-ইলেভেনের পর আর একত্রে আর পুরো পরিবারের সাক্ষাৎ হয়নি। এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ রাত ৯টা ৫ মিনিটে সৌদি আরবের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন খালেদা জিয়া। সৌদি বাদশার রাজকীয় বিশেষ অতিথি হিসেবে সেখানে পবিত্র ওমরাহ পালনের পাশাপাশি মসজিদে নববীতে এতেকাফে বসবেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে পারেন তিনি। ২৮শে রমজান ভোরে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। বিএনপির আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, ২০শে জুলাই লন্ডন থেকে স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে সৌদি আরব আসবেন তারেক রহমান। একই সময় মালয়েশিয়া থেকে স্ত্রী, কন্যাদের নিয়ে সৌদি আরব আসবেন আরাফাত রহমান কোকো। ফলে দীর্ঘ সাত বছর দিন ধরে জিয়া পরিবারের পুনমিলন হতে যাচ্ছে সৌদি আরবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানোর জন্য ইতিমধ্যেই সৌদি আরব চলে গেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরওয়ার, সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। এছাড়া খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীর তালিকায় রয়েছেন চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত এনামুল হক চৌধুরী, খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, গৃহপরিচারিকা কুলসুম। এদিকে মক্কা বিএনপির সভাপতি চৌধুরী মিটু ও মদিনা বিএনপির সভাপতি নুরুজ্জামান আগেই ঢাকায় চলে এসেছেন খালেদা জিয়ার সফরের সার্বিক দেখভালের জন্য। এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুম, সাহাবুদ্দিন আহমেদসহ দলের মধ্যম সারির বেশ কয়েকজন নেতা সৌদি আরব যাবেন বলে জানা গেছে। ৬ সদস্যের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলও খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে যাবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, সৌদি আরবের বাদশার রাজকীয় অতিথি হিসেবে প্রতিবছরই পবিত্র ওমরাহ পালন করতে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এবার তিনি ১৯শে জুলাই রাতে সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে তিনি পবিত্র ওমরাহ পালনের পাশাপাশি মসজিদে নববীতে এতেকাফে বসবেন। আগামী ২৮শে রমজান ভোরে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। ওদিকে লন্ডন থেকে পরিবার নিয়ে তারেক রহমানের আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।