বৃহস্পতিবার, জুলাই ০৩, ২০১৪

মেসি কি ম্যারাডোনার চেয়েও ভালো?

অনিশ্চয়তা ছিল। প্রশ্নও ছিল। লিওনেল মেসি কি পারবেন? ১৩ই জুলাই মারকানার মঞ্চে তিনি থাকবেন কি না সে প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে। তবে মীমাংসা হয়ে গেছে আসল প্রশ্নের। বিশ্বকাপ জিতুক আর না জিতুক অমরত্বের জগতে প্রবেশ করেছে মেসিডিয়ান সভ্যতা। এ সভ্যতার মৃত্যু নেই। ৮৪ বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাস বহু তারকা দেখেছে। তাদের কেউ বিশ্বকাপ জিতেছেন কেউ জিতেননি। তাদের মধ্যেও ওরা দুই জন ছিলেন আলাদা। পেলে এবং ম্যারাডোনা। কে শ্রেষ্ঠ? সে প্রশ্নের সুরাহা হয়নি আজও। হয়তো কোন দিন হবেও না। ব্রাজিল বিশ্বকাপ শুরুর আগেও সমকালীন বিশ্বফুটবলে দু’টি নাম আলোচিত হতো পাশাপাশি মেসি ও রোনাল্ডো। তবে বিশ্বকাপ যখন চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ ক্রিস্টিয়ানা রোনাল্ডো নামটি যেন হারিয়েই গেছে। পাবলো নেইমারের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। চারটি গোল করে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌঁড়েও তিনি রয়েছেন। তবে নিশ্চিতভাবেই তিনি মেসি নন। খোদ ব্রাজিলিয়ান শিবির থেকেই বলা হয়েছে, নেইমার 
একদিন মেসি হবেন। এ বিশ্বকাপের চারটি ম্যাচে মেসির টাচ অব জিনিয়াস একটি নতুন প্রশ্ন জোরেশোরেই তুলেছে। লিও কি ম্যারাডোনার চেয়েও ভালো? লিওনেল মেসি কখনও এ তুলনা পছন্দ করেন না। তবে বিশ্বককাপ শুরুর আগে ডিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছিলেন, মেসি তার চেয়েও ভালো। সবাই জানেন এ কথা এক মহান ফুটবলারের বিনয়। যদিও বিনয় ব্যাপারটি তার সঙ্গে ঠিক যায় না। সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে মেসির শেষ মূহর্তের ম্যাজিকের পর সারা দুনিয়াতেই মেসি-ম্যারাডোনাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আর্জেন্টিনা দলে মেসির সতীর্থ পাবলো জাবেলেতা যেমনটা বলেছেন, মেসি ম্যারাডোনার মতোই। আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিততে হলে লিওকে এভাবেই খেলতে হবে। আমরা জানি মেসি আমাদের অধিনায়ক এবং বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। আমরা তার জন্যই খেলি। আমরা যখন বল পাই তাকেই পাস দেয়ার চেষ্টা করি। কারণ আমরা জানি সে দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাজিলিয়ান টিভি চ্যানেল স্পোর্টস টিভি টু’র মঙ্গলবার রাতের আলোচনায় বারবার ফিরে এলেন ম্যারাডোনা-মেসি। ড্যানিয়েল পাসারেল্লা আটাত্তরের আজেন্টিনার বিশ্বজয়ী টিমের ক্যাপ্টেন। বললেন, ম্যারাডোনার টিমে তবু  একটা বুরুচাগা ছিল, একটা ভালদানো ছিল, একটা ক্যানিজিয়া ছিল। মেসিতো  একা টেনে নিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এই নিয়ে চারটে ম্যাচ হয়ে গেল। ভাবাই যায় না! এখনকার ফুটবলে ট্যাকল আর খেলোয়াড়দের জায়গা না দেয়ার কথা উল্লেখ করে পাসারেল্লা বলেন, মেসি এখনকার যুগে জমি না পেয়েই এই খেলা খেলছে। ও কুড়ি-তিরিশ বছর আগে জন্মালে কী হতো! লোথার ম্যাথিউজ একই রকম উচ্ছ্বসিত। মেসির একক নৈপূন্যের সঙ্গে তুলনীয় হিসেবে কেবল ম্যারাডোনার নামই মনে আসছে তার। যদিও ম্যাথিউজ মনে করেন, লিওনেল মেসির দিনের পর দিন জিতিয়ে দেয়া ধারাবাহিক চলতে পারে না। কোথাও না কোথাও সিস্টেম তাঁকে আটকে দেবেই। ফাবিও কানাভারো যদিও মনে করেন লিও এখনও সেরা ফর্মে খেলতে পারেনি। তিনি বলেন, এখনও তো মেসি পুরো ফর্মের অর্ধেক খেলাই খেলেনি। সেটা খেললে কী হবে। আসুন ব্রাজিল বিশ্বকাপে চার ম্যাচে মেসির পারফরমেন্সে চোখ বুলিয়ে নেই।  চারটি ম্যাচেই ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। মাঠে ছিলেন তিনশ’ ৬৩ মিনিট। গোল  করেছেন চারটি। গোলমুখি পাস একটি। পেনাল্টি বক্স পর্যন্ত একক দৌঁড় ২২ বার। শটের ৫৩ দশমিক তিন ভাগ ছিল লক্ষ্যমুখী। আমরা সৌভাগ্যবান আমরা মেসির সময়ে জন্মেছি।