সরকারের সঙ্গে আঁতাত
ইস্যুতে জামায়াত-বিএনপি দূরত্ব বাড়ছে। রমজানের ঈদের পর বিএনপি নেত্রী খালেদা
জিয়া সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের কথা বলেছেন; কিন্তু তাতে অংশগ্রহণে অনিচ্ছুক জামায়াত। গা-ছাড়া ভাব তাদের মধ্যে।
অস্তিত্ব রক্ষা ও রাজনৈতিক
ভবিষ্যতের হিসাব-নিকাশ করতে গিয়ে আন্দোলনের বিকল্প নিয়ে ভাবছে তারা। আর
জামায়াতের সায় না পেলে একাই আন্দোলনে যাবে বিএনপি- নেতা-কর্মীদের সে মোতাবেক
প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সাম্যবাদী দলের
একাংশের বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের
ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর এ ঘোষণা নিয়ে বিরোধী জোটে শুরু হয়েছে নানা
হিসাব-নিকাশ। বিরোধী জোটের মূল দুই
শরিকের এই টানাপড়েন সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার
শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের পর বিএনপির দেওয়া
কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। কারণ বিএনপি যেভাবে
আগাম কর্মসূচি দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথা বলছে, সেভাবে কোনো আন্দোলন হয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এখন বহির্বিশ্বের
হাতে। তাই সব কিছু কনফার্ম না করে জামায়াত আন্দোলনে যাবে না।
জামায়াতের
সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ জানুয়ারির
নির্বাচনের পর তারা বিএনপির আচরণে ক্ষুব্ধ। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের
পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতকে কোনো সমর্থন দেয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে অন্যদের মতো
জামায়াতের সমালোচনা করেছে। এ কারণে উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত
বিএনপিকে এড়িয়ে চলছে। অনেক স্থানে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এবং ভাইস
চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। এমনকি উপজেলা
নির্বাচনের সময় জামায়াত নেতারা বিএনপি হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। বিএনপির ঘাঁটি
হিসেবে পরিচিত বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের উপজেলাগুলোতে প্রার্থী দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে জামায়াত।
বিষয়টি নিয়ে তখনই কথা ওঠে
বিএনপির ওপর মহলে। এ ছাড়া সরকারি দলের লোকদের দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চে ভাঙন ধরানোর
বিষয়ে সমঝোতার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন
জোটের এক প্রভাবশালী নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াতের অতীতের কিছু ভূমিকায় সরকারের সঙ্গে তাদের
আঁতাতের বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারে থাকাকালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াত
যুগপৎ আন্দোলন করেছে।
প্রয়োজনে আবার সেই দলের দিকে ভিড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তিনি বলেন, জামায়াত অস্তিত্বের স্বার্থে সরকারের
সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই পারে। তবে তা
জোটের কাছে স্পষ্ট হতে হবে।
জামায়াতের একটি
সূত্র জানিয়েছে, তারা এখন আর আগের মতো রাজপথে আন্দোলন
করতে চায় না। কারণ গত পাঁচ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তাদেরই ক্ষয়ক্ষতি
হয়েছে বেশি। ফলে আওয়ামী লীগ
আবারো সরকার গঠন করার পর বিএনপি অনেক বলে-কয়েও জামায়াতকে কঠোর আন্দোলনে
নামাতে পারছে না। তাই বিএনপির পক্ষ থেকে রমজানের ঈদের পর প্রয়োজনে জামায়াতকে ছাড়া
আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের জন্য
প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত
নেতাদের বিচার বিলম্বিত হওয়ার
বিষয়টিকে ঘিরে জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে সন্দেহ করছেন খালেদা জিয়া। তিনি
জোটের বৈঠকে জামায়াত নেতার কাছে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সরাসরি জানতে চেয়েছেন।
জবাবে জামায়াতের কেন্দ্রীয়
নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম খালেদা জিয়াকে বলেন, সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই জামায়াতের।
এটি একটি গুজব। বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে এমন কথা বাজারে ছড়ানো হচ্ছে। তখন
খালেদা জিয়া বলেন, ‘ঠিক আছে ধরে
নিলাম আপনাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তবে গোপনে সম্পর্ক করে থাকলে তাতে
আপনাদেরই ক্ষতি হবে।’ আবদুল হালিম
বলেন, ‘ম্যাডাম সরকারের বিরুদ্ধে
আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের ২৩২ জন নেতা-কর্মী প্রাণ হারিয়েছে। আমরা তাঁদের রক্তের
সঙ্গে বেইমানি করতে পারি না।’
জামায়াতকে
খালেদা জিয়ার সন্দেহ ও
জোটের বৈঠকে জামায়াত নেতার তোপের মুখে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা
কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ৪ জুন
আমাদের জোটের বৈঠক ছিল
গুলশানে খালেদা জিয়ার অফিসে। সেখানে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ খালেদা জিয়াকে
বলেন, ‘ম্যাডাম
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সরকারের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছু সংবাদ
প্রকাশিত হয়েছে। জামায়াতের
সঙ্গে সরকারের গোপন আঁতাত হয়েছে কি না জানা দরকার।’ তখন খালেদা জিয়া জামায়াত নেতা আবদুল হালিমকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘হ্যাঁ, বলো তো আসলে কী? তোমাদের সঙ্গে কি সরকারের কোনো সম্পর্ক আছে?’ জামায়াত নেতা সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের
বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জানতে
চাইলে বিজেপি চেয়ারম্যান
আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘জোটের বৈঠকে তো
অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। সব তো
আমাদের মনে থাকে না।’