শনিবার, জুলাই ০৫, ২০১৪

গোপনে গবেষণা করেছে ফেসবুক

ব্যবহারকারীদের তথ্য নিয়ে গোপনে গবেষণা করেছে ফেসবুক। শুরুতে ছয় লাখ ৮৯ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে গোপনে এই গবেষণা চালায়। আমাদের মেজাজমর্জি কিভাবে ফেসবুক পোস্টের কারণে পরিবর্তিত হয় তা নিয়েই চলে এই গবেষণা। গোপন এই গবেষণা নিয়ে প্রযুক্তিবিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
অনলাইনে আমাদের নিয়ে পরীা করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সামনে আমাদের বিভিন্ন সেবা দিচ্ছে আর পেছনে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এর আগে গুগলের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। আর সম্প্রতি গোপনে ব্যবহারকারীর তথ্য নিয়ে গবেষণা করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে ফেসবুক। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ভোটের রাজনীতিতে কাজে লাগানো হতে পারে ফেসবুকের গোপন গবেষণার ফল। ফেসবুকে আপনার কম্পিউটারে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলেই আপনাকে খুশি করা বা দুঃখ দেয়ার পদ্ধতিটি বের করে ফেলেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
অনলাইন জগতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিয়ে সাধারণ যে পরীা চালানো হয় তাকে বলা হয় ‘এ/বি’ পরীা। অনলাইনভিত্তিক কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের অল্প কিছু গ্রাহককে নিয়ে ভিন্ন ওয়েব অভিজ্ঞতা দেয়ার কাজে এ ধরনের পরীা চালায়। আপনি যদি কোনো ‘এ/বি’ পরীার অংশ হয়ে যান তবে আপনার স্ক্রিনটি অন্যান্য ব্যবহারকারীর চেয়ে ভিন্ন দেখবেন। আপনারা দু’জন একই ওয়েবসাইটে থাকার পরও দু’জন ভিন্ন ভিন্ন স্ক্রিন দেখতে পাবেন।
অনুসন্ধান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গুগল প্রায়ই অনলাইনে ‘এ/বি’ পরীা চালায়। গুগলের সার্চ অ্যালগরিদমে সামান্য পরিবর্তন এনে তা ভালো ফল দেখাচ্ছে কি না সেটি পরীা করতে এই পরীা করে গুগল।
ছয় লাখ ৮৯ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারীর হোমপেজের তথ্য নিয়ে বিশাল পরীা করা হয়েছে, যাতে কোন পদ্ধতিতে মানুষের আবেগ কোন দিকে ধাবিত করা সম্ভব, সে তথ্য পেয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকের এই গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এ গবেষণা করতে ফেসবুক ব্যবহারকারীর নিউজ ফিড ফিল্টার করে তাতে মানুষের মন্তব্য, ভিডিও, ছবি ওয়েবলিংক শেয়ার করার বিষয়গুলো পরীা করে দেখেছে।
মজার ব্যাপার হলো সংবাদ সংস্থা সিএনএনও ‘এ/বি’ পরীা করে। এর মাধ্যমে খবরের বিভিন্ন শিরোনাম বদল করে কোনটিতে বেশি কিক পড়ে বা বেশি পাঠককে আকৃষ্ট করা যায় তা দেখে সিএনএন কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক কর্তৃপও বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে নিউজ ফিডে কোনো কনটেন্ট দেখানো হবে তা দেখতে ‘এ/বি’ পরীা চালিয়েছে। এর ফলে আপনি যদি ফেসবুক ব্যবহারকারী হন, তবে একা আছেন, নাকি কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন, কোন স্কুলে প্রথম গেছেন, আপনি কী পছন্দ করেন, তার সবই এখন জানে ফেসবুক। ফেসবুকের গোপন এই গবেষণা নিয়ে আইনজীবী, ব্লগার, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, রাজনীতিবিদসহ অনেকেই সোচ্চার হয়েছেন এবং সমালোচনা করছেন। আবেগ নিয়ে খেলা করা বা আবেগ নিয়ে প্রতারণা করার বিষয়টিকে সবাইই কলঙ্কজনক ও বিরক্তিকর বলে মনে করছেন। যদি মানুষের চিন্তা-চেতনাকে এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তবে তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন এবং অন্তত তাদের জানিয়ে এসব কাজ করা উচিত। এটি শক্তিশালী একটি বিষয়, আর এ-বিষয়ক কোনো আইন নেই।
বেশির ভাগ ‘এ/বি’ পরীা দু’টি উদ্দেশ্যে করা হয়। একটি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এবং আরেকটি হচ্ছে ব্যবহারকারীর ওয়েব অভিজ্ঞতা আরো উন্নত করতে। একটি বাটন কোন স্থানে বসালে বেশি কিক পড়বে এবং বেশি বিক্রি হবে সে হিসেবে ‘এ/বি’ পরীার ফল নিয়ে বাটন বসানো যায়। সার্চ ইঞ্জিনে আরো উন্নত অনুসন্ধান ফল দেখানো বা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীকে বেশি সময় ধরে রাখাও এর উদ্দেশ্য। তবে ফেসবুক ও অন্যান্য ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীর অনুমতি নেয়ার জন্য ‘অপশন’ রাখতে পারে। যাতে কোনো গবেষণা করার আগে ব্যবহারকারী সে পরীায় অংশ নিতে চান কি না সে নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকবে। ছয় লাখ ৯০ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি জানতেন তারা ফেসবুকের মুড পরীার অংশ হতে যাচ্ছেন তবে ফেসবুককে এত সমালোচনার মুখে পড়তে হতো না।
ফেসবুক কর্তৃপ জানিয়েছেন, ফেসবুকের আমাদের সেবা উন্নত করতে, প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট দেখাতে ও ব্যবহারকারীকে আরো বেশি ফেসবুকের সঙ্গে যুক্ত রাখতে এ গবেষণা করেছি। গবেষণার বড় একটি অংশ ছিল বিভিন্ন ধরনের কনটেন্টের েেত্র মানুষ কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়। ব্যবহারকারীর বন্ধুর পোস্ট করা কোনো খবর বা অনুসরণ করা পাতায় কোনো খবরে নেতিবাচক নাকি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া থাকে, সেটা জানার প্রয়োজনে এ গবেষণা। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আরো উন্নত সেবা দেয়ার কথা বলে এ গবেষণার কারণ ব্যাখ্যা দিলেও অনেকেই তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ফেসবুকের এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে কোনো বিশেষ দলকে জয়ী হতে সাহায্য করতে পারে কিংবা ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের ধরে রেখে তাদের কাছে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখতে ব্যবহৃত হতে পারে। সিএনএন জানিয়েছে, ফেসবুকের দাবি সত্য হলে তাদের উদ্দেশ্য অবশ্যই মহৎ কিন্তু তারা যে উপায়ে এটা করেছে সেটা অনৈতিক। মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করা ‘এ/বি’ টেস্টের একটি উদ্দেশ্যে হলেও ফেসবুকের করা পরীা ইচ্ছাকৃত। এতে মানুষকে জোর করে নেতিবাচক আবেগ ধরে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে।
অনলাইনে এ ধরনের পরীা চালানোর জন্য আমরা নিজেরাই অনুমতি দিয়ে থাকি।
ফেসবুকের তথ্য ব্যবহারের নীতিমালাটি কখনো পড়েছেন?
এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, আপনার অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রণালী, ট্রাবলশুটিং, তথ্য বিশ্লেষণ, পরীা, গবেষণা ও উন্নত সেবা প্রদান করতে সব ধরনের তথ্য ব্যবহার করতে পারবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এর মানে হলো আমরা বিনামূল্যের সেবা গ্রহণ করলেও এর দাম হিসেবে আমরা আমাদের তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছি। তবে দুঃখের বিষয় হলো ইন্টারনেটে আমরা ইতিবাচক ভেবে বিভিন্ন পরীায় গিনিপিগ হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছি!