শনিবার, জুলাই ০৫, ২০১৪

তরুণরা কী ভাবছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে?

এগিয়ে যাচ্ছে সময়। বদলে যাচ্ছে সব সম্পর্কের ধরন। এ সময় তরুণরা কী ভাবছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে? কিংবা শিক্ষকরাই বা কীভাবে দেখছেন এ সম্পর্ককে। এ নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন

-শিক্ষক হবে বন্ধুর মতো।
-আমার শ্রদ্ধার জায়গাজুড়ে শিক্ষক।
-শুধু শ্রদ্ধা নয়, শ্রদ্ধামিশ্রিত বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে শিক্ষকের সঙ্গে।
-আমি আস্থা রাখতে চাই আমার শিক্ষকের ওপর।
শিক্ষক নিয়ে মন্তব্যগুলো স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তন্ময়, সাজ্জাদ, তারেক ও আতিকের। 'শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হবে কিংবা শিক্ষার্থীদের কেমন চাওয়া শিক্ষকদের প্রতি' এমন আলোচনায় উঠে এলো এসব কথা। বিস্তর গল্পে জানা গেল, পিছিয়ে পড়া সাজ্জাদ কীভাবে এগিয়েছেন শিক্ষকের সাহায্য পেয়ে। আবার স্কুলে শিক্ষককে ভয় পাওয়ার কারণে কীভাবে পিছিয়ে পড়েছিলেন আতিক। আতিককে দিয়েই শুরু করা যাক। শিক্ষককে ভয় পেতেন বলে পাঠ্যবইয়ের কোনো বিষয় বুঝতে না পারলেও পুনর্বার জিজ্ঞেস করতেন না। ফলে -'রেজাল্ট খারাপ হতো। মা-বাবার বকা খেতাম। পড়াশোনাটা বিভীষিকার মতো মনে হতো', বলেন আতিক। এখন সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটেছে সাজ্জাদের সঙ্গে। স্কুলে বেশ খারাপ ছাত্র ছিলেন তিনি। সাজ্জাদের ভাষায় যাকে বলে 'ব্যাক বেঞ্চার'। সেই ব্যাক বেঞ্চার কীভাবে প্রথম স্থান লাভ করেছিল, তা শোনা যাক সাজ্জাদের মুখেই। সাজ্জাদের ভাষায়, 'ক্লাস এইটে পড়ার সময় আমাদের স্কুলে নতুন এক শিক্ষক আসেন। আমার রেজাল্ট খারাপ ছিল খুব। কিন্তু কেন জানি ওই শিক্ষকের নজরে পড়ে যাই। এরপর থেকে স্যার আমাকে ডেকে নিতেন, বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দিতেন। আমার আত্মবিশ্বাসের জোগান দিতেন তিনি।' আতিক, সাজ্জাদের মতো অনেকই আছেন, যারা এমন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন। তাহলে কেমন শিক্ষক চাই? এমন প্রশ্নের উত্তর আসে তন্ময়ের কাছ থেকে। তার ভাষায়, 'শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের। আমার শিক্ষকের সঙ্গে আামি সবকিছু শেয়ার করতে পারব। তিনি আমাকে পরামর্শ দেবেন, পাশে থাকবেন।' তবে সাজ্জাদের মতে, এখানেই শেষ নয়, শিক্ষক থাকবে শ্রদ্ধার জায়গাজুড়েও। 'শ্রদ্ধা অশ্যই করতে হবে। শিক্ষক শ্রদ্ধার পাত্র- এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আমার কাছে মনে হয়, বড় হতে হলে অবশ্যই শিক্ষককে শ্রদ্ধা করতে হবে,' বলেন সাজ্জাদ। এবার আতিকের গলায় আক্ষেপ ঝরে। 'স্কুলের ও কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে যদি আরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকত, তবে আরও ভালো হতো। স্কুলের শিক্ষকদের আমি ভয় পেতাম। কলেজের শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও ওই একই ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে যেটা হয়েছে আমি স্কুলে কিংবা কলেজে আমার অনেক দুর্বল দিকগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারিনি। ফলে পিছিয়ে পড়েছি...,' থেমে আবার বলতে শুরু করেন আতিক। 'সেই শিক্ষকই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, যে ছাত্রদের সঙ্গে মিশতে পারে। আমরা সব সময় চাই শিক্ষকদের সঙ্গে মিশতে। যে শিক্ষকরা এ সুযোটা দেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়।' এ তো গেল শিক্ষার্থীদের কথা। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে কেমন ভাবছেন এ সময়ের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিভূতিভূষণ সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়া উচিত। একুশ শতকের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হবে একুশতকীয়। এখানে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং শিক্ষণের বিষয়টি থাকবে। শিক্ষার্থী সঙ্গে কোনোভাবেই ভয়ভীতি, দমনপীড়নমূলক আচরণ করা যাবে না।' একই বিষয়ে ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'সময় বদলে গেছে। এখন বোঝা উচিত শিক্ষার্থীরা কী চায়। আমি বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি, শিক্ষার্থী চায় শিক্ষকদের সঙ্গে মিশতে, তার চিন্তার বিভিন্ন দিক ভাগাভাগি করতে। এটা করতে হলে শিক্ষককে অবশ্যই বন্ধু হতে হবে।'