মঙ্গলবার, জুলাই ১৫, ২০১৪

হস্তমৈথুন ছাড়ার উপায় কী?

নিয়মিত হস্তমৈথুন শরীরের জন্য ভালো। তবে এটা খুব বেশি করলে এবং সেই অনুপাতে শরীরের যত্ন না নিলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্লান্তি আসতে পারে। এটা যাতে নেশায় পরিনত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যাদের কাছে এটা নেশার মত মনে হয়, এবং মনে প্রাণে কমিয়ে দিতে চাইছেন, তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করণীয় হতে পারে-
১. প্রথমেই মনে রাখতে হবে, হস্তমৈথুন বা স্বমেহন কোন পাপ বা অপরাধ নয়। এটা প্রাণীদের একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা করে ফেলে কোন প্রকার অনুশোচনা, পাপ, বা অপরাধবোধে ভুগবেন না। এমন হলে ব্যাপারটা সব সময় মাথার মধ্যে ঘুরবে এবং এ থেকে মুক্তি পেতে আবার এটা করে শরীর অবশ করে ফেলতে ইচ্ছে হবে।
মনে রাখবেন আপনি মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল করে। এটা করে ফেলার পর যদি মনে করেন ভুল হয়ে গেছে তো সেজন্য অনুশোচনা করবেন না। নিজেকে শাস্তি দেবেন না। বরং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হোন যাতে ভবিষ্যতে মন শক্ত রাখতে পারেন।
২. যেসব ব্যাপার আপনাকে হস্তমৈথুনের দিকে ধাবিত করে, সেগুলো ছুড়ে ফেলুন, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন।
যদি মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুন থেকে সত্যি সত্য মুক্তি পেতে চান তাহলে পর্ণ মুভি বা চটির কালেকশন থাকলে সেগুলো এক্ষুনি নষ্ট করে ফেলুন। পুড়িয়ে বা ছিড়ে ফেলুন। হার্ডড্রাইব বা মেমরি থেকে এক্ষুনি ডিলিট করে দিন। ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে ব্রাউজারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল-এ গিয়ে এডাল্ট কন্টেন্ট ব্লক করে দিন।
কোন সেক্স টয় থাকলে এক্ষুনি গার্বেজ করে দিন।
কোন কোন সময় হস্তমৈথুন বেশি করেন, সেই সময়গুলো চিহ্নিত করুন। বাথরুম বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি উত্তেজিত থাকেন, বা হঠাত কোন সময়ে যদি এমন ইচ্ছে হয়, তাহলে সাথে সাথে কোন শারীরিক পরিশ্রমের কাজে লাগে যান। যেমন বুকডন বা অন্য কোন ব্যায়াম করতে পারেন। যতক্ষণ না শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়, অর্থাৎ হস্তমৈথুন করার মত আর শক্তি না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই কাজ বা ব্যায়াম করুন। গোসল করার সময় এমন ইচ্ছে জাগলে শুধু ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন এবং দ্রুত গোসল ছেড়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসুন।
অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সব সময় কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকুন। আগে থেকে সারাদিনের শিডিউল ঠিক করে রাখুন। তারপর একের পর এক কাজ করে যান। হস্তমৈথুনের চিন্তা মাথায় আসবে না।
যারা একা একা সময় বেশি কাটায়, যাদের বন্ধুবান্ধব কম, দেখা গেছে তারাই ঘনঘন হস্তমৈথুন বেশি করে। একা একা না থেকে বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটান। একা একা টিভি না দেখে বন্ধুদের সাথে কিছু করুন। বন্ধুবান্ধব না থাকলে ঘরে বসে না থেকে পাবলিক প্লেসে বেশি সময় কাটান।
৩. বসে না থেকে সময়টা কাজে লাগান। জীবনকে সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড দিয়ে ভরিয়ে তুলুন। সব সময় নতুন কিছু করার দিকে ঝোঁক থাকলে হস্তমৈথুনের ব্যাপারটা মাথা থেকে দূর হয়ে যাবে। এই সাথে আরো সব বাজে জিনিসগুলোও জীবন থেকে হারিয়ে যাবে। নতুন ভাবে জীবনকে উপলব্ধি করতে পারবেন, বেঁচে থাকার নতুন মানে খুঁজে পাবেন।
সৃষ্টিশীল কাজে জড়িয়ে পড়ুন। লেখালেখি করতে পারেন, গান-বাজনা শিখতে পারেন, আঁকাআঁকি করতে পারেন, অথবা আপনি যা পারেন সেটাই করবেন।
নিয়মিত খেলাধূলা করুন। ব্যায়াম করুন। এতে মনে শৃঙ্খলাবোধের সৃষ্টি হবে। নিয়মিত হাঁটতে পারেন, দৌড়াতে পারেন, সাঁতার কাটতে পারেন, জিমে গিয়া ব্যায়াম করতে পারেন। বিকেলে ফুটবল, ক্রিকেট- যা ইচ্ছে, কিছু একটা করুন।
স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন। ফলমূল-শাকসবজি বেশি খাবেন।
নতুন কোন শখ বা হবি নিয়ে মেতে উঠুন। বাগান করতে পারেন, নিজের রান্না নিজে করতে পারেন, আরো কত কিছু আছে করার। আপনি যা করতে বেশি পছন্দ করেন, সেটাই করবেন। কিছুদিন পর আবার আরো নতুন কিছু করতে বা জানতে চেষ্টা করুন।
অফুরন্ত সময় থাকলে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ুন। দেশ ও দশের জন্য সেবামূলক কাজে জড়িত হোন।
৪. ধৈর্য ধরতে হবে। একদিনের একটা নেশা থেকে মুক্ত পাবেন, এমন হবে না। একাগ্রতা থাকলে ধীরে ধীরে যে কোন নেশা থেকেই বের হয়ে আসা যায়। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাবে। তখন হতাশ হয়ে সব ছেড়ে দেবেন না। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার আগাতে হবে।
ভালো কাজ করলে নিজেকে নিজে নিজে পুরস্কৃত করবেন। ভালো কোন জায়গাত ঘুরতে যাবেন। ভালো কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসবেন। নিজেকে ছোট ছোট গিফট কিনে দেবেন এবং সেগুলো চোখের সামনে রাখবেন এবং মনে করবেন যে অমুক ভালো কাজের জন্য এই জিনিসটা পেয়েছিলেন।
৫. অপরের সাহায্য নিতে ভুল করবেন না। রাতের বেলা হস্তমৈথুন করলে কারো সাথে রুম শেয়ার করুন। বা দরজা জানালা খোলা রেখে আলো জ্বালিয়ে ঘুমান। যখন দেখবেন যে সব চেষ্টা করেও একা একা সফল হতে পারছেন না, তখন বন্ধুবান্ধব, পরিবার, ডাক্তার- এদের সাহায্য নেয়া যায়। এখানে লজ্জার কিছু নাই।
###########
কিছু টিপস:
১. ঘুমে সমস্যা হলে তখন সুগার ফ্রি মিন্টস্‌ বা ক্যাণ্ডি চিবাতে পারেন। হালকা কিছু খেলেও তখন উপকার হয়। তবে ঘুমিয়ে পড়ার আগে দাঁত ব্রাশ করে নেবেন।
২. কম্পিউটারে পর্ণ ব্লকিং সফটওয়ার ইনস্টল করে নিন। আজব একটা পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখেন যাতে পরে ভুল যান। অথবা কোন বন্ধুকে দিয়ে পাসওয়ার্ড দিন। নিজে মনে রাখবেন না।
৩. কম্পিউটারে পর্ণ দেখতে দেখতে হস্তমৈথুন করলে কম্পিউটার লিভিং রুমে নিয়ে নিন যাতে অন্যরাও দেখতে পায় আপনি কী করছেন। এতে পর্ণ সাইটে ঢোকার ইচ্ছে কমে যাবে।
৪. হস্তমৈথুন একেবারেই ছেড়ে দিতে হবে না। নিজেকে বোঝাবেন যে মাঝে মাঝে করবেন। ঘনঘন নয়।
৫. যারা বাজে বিষয় নিয়ে বা মেয়েদের নিয়ে বা পর্ণ মুভি বা চটি নিয়ে বেশি আলোচনা করে, তাদেরকে এড়িয়ে চলুন।
৬. যখন দেখবেন খুব বেশি হস্তমৈথুন করতে ইচ্ছে হচ্ছে এবং নিজেকে সামলাতে পারছেন না, বাইরে বের হয়ে জোরে জোরে হাঁটুন বা জগিং করুন।
৭. সন্ধ্যার সময়ই ঘুমিয়ে পড়বেন না। কিছু করার না থাকলে মুভি দেখুন বা বই পড়ুন।
৮. ভিডিও গেম খেলতে পারেন। এটাও হস্তমৈথুনের কথা ভুলিয়ে দেবে।
৯. হস্তমৈথুনে চরম ভাবে এডিক্টেড হলে কখনোই একা থাকবেন না, ঘরে সময় কম কাটাবেন, বাইরে বেশি সময় কাটাবেন। জগিং করতে পারেন, সাইকেল নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। ছাত্র হলে ক্লাসমেটদের সাথে একসাথে পড়াশুনা করতে পারেন। লাইব্রেরি বা কফি শপে গিয়ে সময় কাটাতে পারেন।
১০. সেক্সুয়াল ব্যাপারগুলো একেবারেই এড়িয়ে চলবেন। এধরনের কোন শব্দ বা মন্তব্য শুনবেন না।
১১. ছোট ছোট টার্গেট সেট করুন। ধরুন প্রথম টার্গেট টানা দুইদিন হস্তমৈথুন করবেন না। দুইদিন না করে পারলে ধীরে ধীরে সময় বাড়াবেন।
১২. যখন তখন বিছানায় যাবেন না। কোথাও বসলে অন্যদের সঙ্গ নিয়ে বসুন।
১৩. বাথরুম শাওয়ার নেয়ার সময় হস্তমৈথুনের অভ্যাস থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাথরুম থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করুন।
১৪. যখনি মনে সেক্সুয়াল চিন্তার উদয় হবে, তখনই অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন।
১৫. মেয়েদের দিকে কুনজরে তাকাবেন না। তাদের ব্যাপারে বা দেখলে মন আর দৃষ্টি পবিত্র করে তাকাবেন। নিজের মা বা বোন মনে করবেন।
১৬. হাতের কব্জিতে একটা রাবারের ব্যান্ড লাগিয়ে নেবেন। সেক্সুয়াল চিন্তার উদয় হলে তুড়ি বাজাতে পারেন, পা দোলাতে পারেন- এতে কুচিন্তা দূর হয়ে যাবে।
১৭. যতটা সম্ভব নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
১৮. যে কোন উপায়ে পর্ণমুভি আর চটি এড়িয়ে চলুন।
১৯. বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সবার সাথে বেশি সময় কাটান।
২০. ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন।
২১. নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করবেন, আপনার সাথে যারা আছে তাদের কথা ভাববেন।
২২. বাড়িতে বা রুমে কখনো একা থাকবেন না।
২৩. কোনদিন করেন নাই, এমন নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন।
২৪. উপুর হয়ে ঘুমাবেন না।
২৫. বিকেলের পরে উত্তেজক ও গুরুপাক খাবার খাবেন না।
২৬. গার্লফ্রেণ্ড বা প্রেমিকাদের সাথে শুয়ে শুয়ে, নির্জনে বসে প্রেমালাম করবেন না।
২৭. ফোনসেক্স এড়িয়ে চলুন।